পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিযাত্রিক ©፭ማ রাত্রেই ফিরতেন, তাকে দেখতাম ফাউস্ট-এর কয়েকখানা পাতা না পড়ে কিছুতেই ঘুমোতেন না। আমি যেদিন কুঞ্জবন প্যালেস দেখতে গেলুম দ্বিতায় বাব, সেদিন সকালবেলা ধোপা তাগাদ করতে এসে ভদ্রলোককে অনেক কড়া কথা শুনিয়ে . আমার বড় কষ্ট হল । হিন্দুস্থানী ধোপা, সে গেস্ট-হাউসের অনেক বাবুসাহেবের কাপড় কেচছে, এমন তাগাদ কাউকে কখনও করতে হয়নি, আজ সাত আট দিন ছাটাইটি করচে, আর সে কতদিন ইটবে ? আমার ইচ্ছে হল ভদ্রলোককে বলি, যদি তার কাছে না থাকে, আমার কাছ থেকে কিছু না হয় নিতে কিন্তু তাতে যদি তিনি কিছু মনে করেন ? আগরতলায় আমার থাকবার দিন ফুরিয়ে এল। কর্নেল মহিমচন্দ্র দেব বর্মন মহাশয়ের দুটি উরুণ আত্মীয়-যুবকের সঙ্গে আমার খুব আলাপ হয়ে গিয়েছিল, এদের যুবক না বলে বালক বলাই সঙ্গত, কারো বয়স সতেরোর বেশি না । ওরা রোজ গেস্ট-হাউসে আসতো, গল্পগুজব করে চলে যাবার সময় আমায় টেনে নিয়ে যেতো তাদের সঙ্গে । একদিন ওবা বললে, চলুন পিকনিক করা যাক শহরের বাইলে কোথাও— আমি বললুম, পাহাড়ের দিকে যাওয়া যাক— আমার গেস্ট-হাউসের সঙ্গীটি তখন ছিলেন না, রাত্রে ঠার কাছে প্রস্তাব করতেই তিনি তখনি রাজি হয়ে গেলেন। বললেন, আমার কি দিতে হবে ? আমরা হিসেব করে দেখেছিলুম জন-পিছু এক টাকা করে দিলেই চমৎকার পিকনিক হয়ে যায়। সস্তার দেশ, তা ছাড়া সাদাসিদে সাধারণ জিনিস ছাড পাওয়াই যখন যায় না। ওঁকে সেকথা বললুম, উনি তখন বললেন, তাহলে টাকাটা আমার কাছ থেকে নিয়ে নেবেন সকালবেলা । আমার ইচ্ছে ছিল না টাকার কথা তোলবার,উনিষ্ট তুললেন, কাজেই আমায় বলতে হল। রাত্রে শুয়ে কেবলই মনে হতে লাগলে উনি এখন একটা টাকা পাবেন কোথায় ? বলে ভালো করিনি। কিন্তু টাকা নিতে না চাইলে ভদ্রলোকের আত্মসন্মানে আঘাত দেওয়া হয় এদিকে, সুতরাং টাকা দিতে চাইলে নেবো নিশ্চয় । ভোরে উঠে দেখি আমার সঙ্গী কোথায় বেরিয়েচেন আর আসেন না। আটটার সময় আমাদের রওনা হবার কথা, ছেলে দুটি আমায় ডাকতে এসে বসে রইল, দশটা বাজে, তথনও দেখা নেই তার। প্রায় সাড়ে দশটার সময় তিনি এলেন, আমাদের দেখে যেন কেমন হয়ে গেলেন। আমরা বললুম, আপনার জন্তেই বসে আছি। চলুন, বেল হয়ে গেল । ভদ্রলোক আমতা আমতা করে বললেন– এই একটু কাজে বেরিয়েছিলাম। তা এইবার— থানিক পরে আমার মাড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে বললেন, আমার ভে যাওয়া হবে না বিভূওবাৰু, আমার একটু কাজ আছে আজ—