পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ՋԵ বিভূতি-রচনাবলী দক্ষিণ-বিহারে তো একেবারেই নেই, বরং উত্তর-বিহারের বড় নদীর ধারে বাংলাদেশের মতো ঝোপ অনেক দেখেচি । বাংলাদেশের ঝোপের একটা নিজস্ব সৌন্দর্য আছে, এমনটি আর কোথাও দেখিনি। আমাদের জেলায় আমি জানি এমন অদ্ভুত ধরনের সুন্দর ঝোপ আছে, যার মধ্যেকার নিবিড় ছায়ায় গ্রীষ্মের দিনে সারাবেল বসে কাটানো যায় নানা অলস স্বপ্নে। প্রধানত ঝোপ খুব ভালো হয় কেয়োবাঁকি ও ষাড়া গাছের । কেয়োবীক মোট কাঠের গুড়ি যুক্ত গাছ হলেও লতার মতে একেবেঁকে ওঠে ও বিস্তৃত হয়ে পড়ে, এর পাতাগুলো মখমলের মতে নরম, মহৰ্ণ শশসালে এবং অত্যন্ত সবুজ। কেয়োবাকার স্বভাবই ঝোপ স্বষ্টি করা, যেখানে যে অবস্থাতেই থাকু জঙ্গলে—কারণ কেয়োঝাকা বনের গাছ, স্বত্ব করে বাড়িতে কেউ কখনো পোতে মা—এঁকেবেঁকে উঠে ঝোপ স্বষ্টি করবেই। আর কি সে ঝোপের নিবিড়, শান্ত আশ্রয়। ষাড়া গাছও এ রকম ঝোপ তৈরি করে, কিন্তু সে আরও উচু ছাদওয়ালা বড় ঝোপের স্বষ্টি করে ; ধাড়াগাছ উচু হয় অনেকখানি, ডালপালাও কেয়োবাকার চেয়ে অনেক মজবুত। শুধু অবিপ্তি এই গাছগুলি ঝোপ তৈরি করে না, যদি গাছের মাথায় অন্ত লতা না ওঠে। কিন্তু বাংলাদেশের জঙ্গলে বন-কলমী, ঢোল-কলমী, কেলে-কেঁাড়া, বন-মরচে, বন-সিম, অপরাজিত, ছোট গোয়ালে, বড় গোয়ালে প্রভৃতি লতা সর্বদাই আশ্রয় খুঁজে বেড়াচ্চে অস্ত গাছের, অবিবাহিত মেয়েদের মতো। এদের মধ্যে সব লতারই চমৎকার ফুল ফোটে, কোনো কোনো ফুলের মধুর মুবাসও আছে, যেমন কেলে-কোড়া ও বন-মরচে লতার ফুল। পুপপ্রসবের সময়ে এই সব লতা যখন ছোটবড় ঝোপের মাথা নীল, সাদ, ভায়োলেট রঙের ফুলে ছেয়ে রাখে তখন নদী-প্রান্তবর্তী বন বহুদূরের আভাস এনে দেয় মনে। মুগ্ধ নীল আকাশের তলায় এদের পাশে বসে যেন সারাজীবন কাটিয়ে দেওয়া যায়, কত কি স্বপ্ন যে এরা মনে আনে । বিলেতে আমেরিকায় ঝোপের মূল্য বোঝে, তাই বড় আধুনিক ধরনের বাগানে ঝোপ রচনা করবার মতো গাছপালা পুতে দেয়। বাগান আর্টিস্টিক ভাবে তৈরি করবার জন্তে ওদের দেশে একজাতীয় শিল্পী আছেন, তাদের garden architect বলে। এরা মোটা মজুরি নিয়ে অতি চমৎকার ভাবে তোমার আমার বাগান তৈরি করে দেবে। ফলের বাগান নয়, স্বধৃগু ফুল ও অন্তান্ত গাছের বাগান। এই বাগানে ঝোপের বড় দাম। সাধারণত দু-ধরনের ঝোপ এই সব বাগানে করা হয়, Arbour জাতীয়, Pergola-জাতীয়। শেষোক্ত শ্রেণীকে ঠিক আমাদের পরিচিত ধরনের ঝোপ বলা যায় না, কারণ ওটা হচ্চে লতাপাত দিরে ছাওয়া ভ্রমণপথ, অনেকটা আমাদের লাউ-মাচ, পুই-মাচার মতে, ভলা দিয়ে পাথর বাধানে রাস্তা, খুঁটির বদলে অনেক বাগানে (যেমন কালিফোর্নিয়ায় বিখ্যাত মিসেস নাইটের বাগান, ইতালির অনেকগুলি মধ্যযুগের জমিদার বা ডিউকদের বাগান ) মার্বেল পাথরের থাম দেওয়া।