পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

808 বিভূতি-রচনাবলী মোহান্তজীও কৌতুকপূর্ণ হয়ে বললেন—কি বাবুজি, কি দেখলেন ? পাড়েজী বললে—বাবু, ও-সব কলসীতে ঘোল বুঝতে পারলেন না ? এত ঘোলের কলসী একত্র কখনো জীবনে দেখিনি। কি করে বুঝতে পারবো ? কিন্তু এত ঘোল এল কোথা থেকে ? ওদের ঘরের দাওয়ায় আমাদের জন্তে জলচৌকি পেতে দিল শ্রীরাম পাড়ে। আমরা বসলুম—তারপর মোহান্তজীর মুখে ব্যাপারটা শোনা গেল, এটা মাথনের ও দ্বিয়ের কারখানা। দুধ অত্যন্ত সস্ত। এসব অঞ্চলে, টাকায় ষোল সের পর্যন্ত বিক্র হতে দেখেচি ; মহিষের দুধ বরং একটু চড়া দরে বিক্ৰী হয়, কারণ খি করবার জন্তে মহিষের দুধ গোয়ালারা কেনে, কিন্তু গোরুর দুধের দাম নেই এখানে—গোরুর দুধের মাথন ও খি করবার রেওয়াজ নেই এখানে। শ্রীরাম পাড়ের বাড়ি ছাপরা জেলায়। সে এক মাখন-তোলা কল নিয়ে এসে এই মাঠেরই মধ্যে প্রথম একখানা চালাঘর তুলে বঙ্গে—সে আজ এগারো বছর পূর্বের কথা । এই এগারো বছরের মধ্যে শ্রীরামের ব্যবসা এত বড় হয়ে উঠেচে যে ওকে মাঠের মধ্যে অনেকখানি জমি নিয়ে ঘিরে বড় বড় দুখানা আটচালা ঘর, আর ছোট ছোট চালাঘর অনেকগুলি করতে হল, মাখন-তোলা কল আরও দুটো এনেচে । তার ব্যবসা খুব জোর চলেচে । আমার বড় ভালো লাগলো মোহান্তজীর এই গল্প। শ্রীরাম পাড়েকে আমি যেন নতুন চোখে দেখলুম। লোকটা খুব নিরীহ ধরনের, মুখে বেশি কথা বলে না—বোধহয় কথা বলে না বলেই কাজ বেশি করে। —আপনার এখানে কত দুধ লাগে রোজ ? —তার কিছু ঠিক নেই বাবুজি—পনেরো মণ দুধের মাখন সাধারণত হয়, তবে-একদিন হয়তো বিশ-বাইশ মণ দুধ এল। তিনটে কল হিমশিম খেয়ে যায় । —কলসীতে অত ঘোল কিসের ? ওতে কি হবে ? —রোজ পনেরো বিশ মণ দুধের ঘোল তো সোজা নয় বাবু। এত ঘোল সব আমি রেলে চালান দিই। পূর্ণিয়া অঞ্চলে ওর খুব বিক্রী। পড়তে পায় না বাৰু। —মাসে কত ঘি হয় তোমার কারখানায় ? —আমি ঘি তত করিনি বাবু, মাখন চালানিতে লাভ বেশি। বেশি দুধ হলে খোরা ক্ষীর করি। তবে চারমণ ঘি মাসে চালান দিই। —কত লোক খাটে ? - দুধ সংগ্রহ করে আনবার জন্তে আট-দশ জন লোক রাখতে হয়েছে। ওরা রোজ ভোরে উঠে গ্রাম থেকে দুধ নিয়ে আসে। গোয়ালারা নিজেরাও দুধ দিয়ে যায়—সব দাদন দেওয়া আছে। তা ছাড়া কারখানায় আরও দশ বার জন লোক খাটে। ছাপরা জেলা থেকে এসে এই অজ পাড়াগারে বসে লোকটা অত্যন্ত সামান্ত মূলধন নিয়ে এই ব্যবসা আরম্ভ করে এখন বেশ উন্নতি করে তুলেছে—ওর কথা থেকে ক্রমে ক্রমে বুঝতে পারা গেল। আমি ভাবলুম আমার দেশের বেকার যুবকদের কথা, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়ে বার হয়ে সামান্ত