পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিযাত্রিক 88} সে এখন আমার নিয়ে কি করে ? বেল প্রায় একটা বাজে। আমায় সে ঘাড়ে করে নিয়ে যেতে পারে না বাক পর্যন্ত, অথচ সত্যিই পা ওঠাবার শক্তিটুকুও নেই আমার। আমি বললুম—অম্বিক, বাকা থেকে একথান গাড়ি নিয়ে এস গিয়ে, আমি এখানেই থাকি । অম্বিকা যেতে রাজি নয়। আমায় এ অবস্থায় ফেলে সে কোথাও যাবে না । তার চেয়ে আমি বসে বিশ্রাম করি, যদি এর পরে আমি ইটিতে পারি—সে আমার সঙ্গে এখানেই १ोकहरु । বেলা আড়াইটের সময় আমি কিছু মুস্থ হয়ে পুনরায় হাটতে আরম্ভ করলুম। অম্বিক ঘড়ি দেখে বললে, বেলা ঠিক আড়াইটে—এক ঘণ্টার মধ্যে বাকী পৌঁছে যাবো। আরও দেড় ঘণ্টা চলে গেল, বাকার চিহ্ন নেই কোনো দিকে । আমি বললুম—শর্টকাটু করতে গিয়ে এই বিপদটি বাধলো। সোজা ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের রাস্তা দিয়ে গেলে কোন কালে বাকা পৌঁছে যেতুম। বেলা যখন বেশ পড়ে এসেচে, তখন আমরা বাকী পৌছে গেলুম। সেখানে জিজ্ঞেস করে জানা গেল মাঠের মধ্যে আমরা ভুল পথ ধরেছিলুম, তাই আমাদের এত বিলম্ব। যে ভদ্রলোকের বাড়ি আমরা গিয়ে উঠলুম, তারাও বাঙালী কিন্তু অনেকদিন বিহারে বাস করবার ফলে একেবারে বিহারী হয়ে গিয়েচেন। ছেলেমেয়েরা এখন ভালো বাংলা বলতে পারে না । তাদের আদর-যত্ন মনে রাখবার জিনিস বটে। রাত্রে আমাদের জন্তে তারা পুরী-তরকারি করে দিলেন, আহারান্তে শয্যা আশ্রয় করে মনে হল তিন দিনের মধ্যে আমি আর বিছানা ছেড়ে উঠতে পারবে না। অম্বিকাকে বললুম—দেওঘর যাওয়া এপানেই ইতি। আমি এক করে কাল সকালে মানার হিল যাবে, সেখান থেকে ট্রেনে ভাগলপুর। পায়ে হেঁটে বেড়ানোর শখ আমার মিটেচে। অম্বিক আমায় নানারকমে বোঝাবার চেষ্টা করে। এখন ভাগলপুর ফিরলে লোকে কি বলবে, কত জাক করে বেরুনো হয়েচে ভাগলপুর থেকে, তুমিই সকলের চেয়ে জোরগলায় চেচিয়েছিলে যে পায়ে হেঁটে ভ্রমণ সব ভ্রমণের সেরা । তোমার এই শোচনীয় পরাভবে— ইত্যাদি। আমি নাছোড়ব না। শরীরের সামর্থে না যদি কুলোয়, আমি কি করবো । আমার এক পা হাটবার ক্ষমতা নেই আর। বন্ধুর বকুনি শেষ হবার পূর্বেই আমি ঘুমিয়ে পড়লুম। কিন্তু ভোরে উঠে দেখি যে আমার পায়ের ব্যথা অদ্ভূত ও অপ্রত্যাশিতভাবে সেরে গিয়েচে। এদিকে আমার বন্ধু চা পান শেষ করে বললেন—তাহলে একথানা এক ডাকি, এইবেলা মান্দার হিলে রওনা হওয়া যাক । আমি বললুম, আর মালার হিলে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, ইটিতে পারবো এখন, চলো রওনা হই ।