পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিযাত্রিক 888) নদীয়াৰ্চাদবাবু অনেক প্রজা নিয়ে কাছারি করচেন। আমাদের যথেষ্ট অভ্যর্থনা করলেন। বনের মধ্যে একটা ইদারা, তার চারিদিকে সিমেন্ট বাধানো—আমরা সেখানে স্বান করে ভারি তৃপ্তি পেলুম। আহারাদির পরে নদীয়াবাবু বললেন- এখানে এই বনের মধ্যে আমার তিন দিন থাকতে হবে। আপনারা যখন এসেচেন, তখন একটা রাত অন্তত আমার এখানে কাটিয়ে যান। আজ আর আপনাদের কিছুতেই ছাড়চিনে। আমাদের কোনো আপত্তি তিনি শুনলেন না। লোকটি বিশেষ ভদ্র ও শিক্ষিত, তার অনুরোধ এড়ানো আমাদের পক্ষে সম্ভব হল না । শালবনের নিস্তব্ধতার মধ্যে কি সুন্দর বৈকাল আর জ্যোৎস্নারাত্রি কাটলো! মন একেবারে মুক্ত, পথের নেশায় মাতাল, কতদূর এসে পড়েচি পরিচিতের সীমা ছাড়িয়ে—এমন একটি মুনীর রাত্রি জীবনে আর হয়তো না-ও মিলতে পারে। নদীয়াবাৰু আমাদের কাছে বসে বসে গল্পগুজব করলেন অনেকক্ষণ। কথায় কথায় বললেন—আপনারা ধদি এসেচেন এ পথে, তবে লছমীপুর দেখে যান একবার। চমৎকার দৃশু ওখানকার । আপনার খুশী হবেন। —এখান থেকে কতটা হবে ? —প্রায় সাত মাইল—তবে পাকা সড়ক ছেড়ে অন্ত রাস্তায় যেতে হবে-জঙ্গল পড়বে খুব । রাত্রে শুনে আমি বন্ধুকে বললুম—জেলাবোর্ডের রাস্তা ছেড়ে দিয়ে চলে আমরা আগে লছমীপুর দেখে আসি। বন্ধু আপত্তি করলে। সে শুনেচে লছমীপুর ছাড়িয়েই দশ-বারো মাইল জঙ্গল, সে পথে হেঁটে যাওয়া বড় বিপজ্জনক, আমাদের যাওয়া উচিত হবে না । আমি তার কাছে আরাকান ইরোমার জঙ্গলের কথা বললুম। তার চেয়ে বেশি জঙ্গল আর কি হবে। লছমীপুরের প্রাকৃতিক দৃশ্বের কথা ভাগলপুরে থাকতে অনেকের মুখে শুনেচি। এতদূর যখন এসেচি, লছমীপুর দেখে যাওয়াই ভালো। অনেক রাত পর্যন্ত কথা-কাটাকাটির পরে অম্বিকাকে রাজি করানো গেল। পরদিন খুব ভোরে উঠে আমরা নদীয়াৰ্চাদবাবুর কাছে বিদায় নিয়ে লছমীপুর রওনা হবার জন্তে বী-দিকের বনপথ ধরলুম। তখন সবে স্বর্য উঠেচে। সত্যিই পথটির দৃপ্ত চমৎকার। এই প্রথম রাঙা মাটি চোথে পড়লো—উচুনীচু জমি, শাল ও পলাশ গাছের সারি, মাঝে মাঝে ছ একটা বট গাছ। নানা জায়গায় বেড়িয়ে আমার মনে হয়েচে, বট গাছ যত বেশি বনে, নাঠে, পাহাড়ের ওপর অধত্বসস্তৃত অবস্থায় দেখা যায়, অশ্বখ তেমন নয়। বাংলার বাইরে, বিশেষ করে এই সব বন্ত অঞ্চলে, অশ্বখ তো আদৌ দেখেচি বলে মনে হয় না—অথচ কত বন-প্রাস্তরে, কত পাহাড়ের মাথায়, সঙ্গিহীন সুপ্রাচীন বটবৃক্ষ ও তার মাথায় সাদা সাদা বকের পাল যে দেখেচি, তাদের সংখ্যা নিতান্ত তুচ্ছ হবে না। দক্ষিণ-ভাগলপুরের এই অঞ্চলের জমি গঙ্গা ও কুশীর পলিমাটিতে গড় উত্তর-ভাগলপুরের