পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিযাত্রিক 8৬১ চারিদিকে চেয়ে দেখেচি। এ বনের মধ্যে কোথাও একটা দোকান-পসার চোখে পড়েনি যে এক পয়সার মুড়ি কিনে খাই । কিছু মেলে না এ বনে,নিকটে একটা বস্তি পর্যন্ত নেই। এমন জানলে বিলাসপুর থেকে কিছু খাবার কিনে আনতাম। স্টেশন-মাস্টারকে জিজ্ঞেস করবো ? কোনো দোকান না থাকলে ওরাই বা থাবার কোথা থেকে আনায় ! কিন্তু জিজ্ঞেস করতে কেমন বাঁধে-বাধে ঠেকতে লাগলো। ভাবলুম, লোকটা মনে করতে পারে হয়তো তার বাড়িতেই আমি খেতে চাইচি। না, এ প্রশ্ন ওকে করা হবে না । বেলা চারটে । তখন আমি সত্যিই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েচি। যদি লোক না-ই আসে তবেই বা কি করবো ? স্টেশনের দেওয়াল-সংলগ্ন টাইমটেবিল দেখে বুঝলাম রাত সাড়ে সাতটায় বিলাসপুরে ফিরে যাবার অার একখানা ডাউনট্রেন আছে—তাতেই ফিরে যাবে। বিলাসপুরে এবং সেখান থেকে কলকাতায়। পয়সা খরচ করে এতদূরে অনর্থকই এলুম। এখানে বসে থেকেও তো আর পারিনে। সেই বেলা৯টা থেকে আর বেলা চারটে পর্যন্ত না খেয়েদেরে ঠায় একখানা বেঞ্চির ওপর বসে আছি, স্টেশনটা মুখস্থ হয়ে গেল ; এর কোথায় কি আছে আমি যতকাল বেঁচে থাকবে, ততকাল নিখুঁত ভাবে মনে থাকবে এমন গভীর ভাবে এর ছবি আঁকা হয়ে গিয়েচে আমার মনে । অথচ বৃষ্টি মাঝে মাঝে থামলেও একেবারে নির্দোষ হয়ে থেমে যায়নি। এই সময় স্টেশন-মাস্টারটি স্টেশন ঘর থেকে বেরিয়ে আবার নিজের বাসায় ফিরে চললো। যাবার সময় পুনরায় আমার দিকে কৌতুহলের দৃষ্টিতে চেয়ে চেয়ে গেল ; একবার জিজ্ঞাসাও করে না যে আমি কে, কেন এখানে সেই সকাল থেকে বসে আছি দারুব্রহ্মের মতো আচল অবস্থায়—বেশ লোক যাহোক । স্টেশন আবার জনহীন । একে মেঘান্ধকার দিন, তার হেমন্তের ছোট বেলা, এরই মধ্যে যেন বেশ বেলা পড়ে আলে আসে হল, মনে হতে লাগলো সন্ধ্যাহবার আর বেশি দেরি নেই। কি করা যায় এ অবস্থায় । রাত্রি কাটাতে হলে যতদূর বুঝচি, স্টেশন-মাস্টারের স্টেশনের ঘরখানার মধ্যে আমার জায়গা দেবে না, এই বাইরের বেঞ্চিখানাতেই আমার শুয়ে থাকতে হবে । এমন সময় দূরে বাজনা-বাড়ির শৰ শোনা গেল। চেয়ে দেখি একদল লোক বাজনা বাজিয়ে স্টেশনের দিকে আসচে। কাছে এলে দেখলুম তারা বরযাত্রী, দশ-বারে বছরের একটি বালক বরসাজে ডুলি চেপে এসেচে ওদের সঙ্গে। আশ্বিন মাসে বিবাহ কি রকম ? এদেশে বোধহয় হয়ে থাকে । ওদের মধ্যে তিন-চারজন লোক এসে আমার বেঞ্চিত্তে বসলো। নিজেদের মধ্যে ওয়া খুৰ গল্প-গুজব হল্লা করচে, একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম—কেউ কোনোরকম ধূমপান করছে না। পরের পয়সায় ধূমপান করবার এমন স্বৰোগ যখন বরযাত্রী হয়ে এর ছেড়ে দিচ্চে তখন মনে হল ধূমপানের প্রথা এদেশে কম। পরে জেনেছিলুম, আমার জয়মানের মধ্যে অনেকখানি