পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী كbوا\8 সত্যই ভদ্রলোককে মনে হচ্ছিল যেন কতকালের পুরাতন পরিচিত আত্মীয় ! বিদেশে না যে কখনো বার হয়েছে, সে বুঝবে না দূরদেশে একজন বাঙালীর দেখা পাওয়া কি আনন্দের ব্যাপার। অল্পক্ষপ পরে ভদ্রলোক এসে বসলেন—চা-ও এল । আমি বললুম—এখানে কতদিন আছেন ? —তা আজি সতেরো বছর, কি তার কিছু বেশি। —কি উপলক্ষ্যে থাকা হয় এখানে ? —আমার একট। গালার কারখানা আছে, দেখাবো এখন। তাই নিয়ে পড়ে আছি— এই তো চাকুরির বাজার। —ন না, বেশ ভালো করেচেন। আপনি বাঙালী, এতদূর এসে গালার কারখানা খুলেচেন, এ খুব গৌরবের কথা। চলচে বেশ ভালো ? —আজ্ঞে হা, তা একরকম আপনার বীপ-মায়ের আশীর্বাদে ; তবে কি জানেন, এতদিন যা হয় হয়েচে, মন আর এখন টেকে না । —আপনার বাড়ির সব এখানেই বোধ হয়। তবে আর মন টেকাটে কি কি, সব নিয়েই যখন আছেন । ভদ্রলোক তখনকার মতো চুপ করে গেলেন আমার মতে সায় দিয়ে, একবার নিরুৎসাহসুচক ঘাড় মেড়ে। রাত্রে বাড়ির মধ্যে খেতে গিয়ে দেখি বৃদ্ধ মাতা ছাড়া ভদ্রলোকের সংসারে দ্বিতীয় লোক নেই, সম্ভবত আর একটি ছোট ছেলে বা মেয়ে থাকে, সে তখন পাশের ঘরে ঘুমুচ্ছিল। ঘরদোরের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ ও অগোছালো। বাড়ির পেছনে একটা সংকীর্ণ উঠান, ভার মধ্যে কিসের একটা মাচা ; উঠানটাতে বেজায় কাদা হয়েচে কদিনের বৃষ্টিতে। মাটির কলসীতে জল রাখা মাচাতলার নীচে । ইতিপূর্বে ভদ্রলোকের নাম জেনেছিলাম ; তিনি ব্রাহ্মণ, নদীয়া জেলায় বাড়ি একথাও জেনেচি। তার বৃদ্ধ মাকে পায়ের ধুলো নিয়ে প্রণাম করলুম। খাওয়ার আয়োজন বিশেষ কিছু নয়। মোট চালের ভাত, ডাল ও টেড়শের তরকারি, বড়ি ভাজা । এদেশে কোনো তরি-তরকারি বা মাছ বড় একটা মেলে না—ঢেড়শ ও টোমাটো ছাড়া। খাওয়া-দাওয়ার বড় কষ্ট । এসব কথা শুনলুম ভদ্রলোকের কাছেই। খাওয়ার পরে যেতে উদ্যত হলুম, ভদ্রলোক অবাক হয়ে বললেন—কোথায় যাবেন ? সেই খোলা গুদোমে ? আপনি বেশ লোক তো! এখানে আপনাকে রাত্রে একটু জায়গা দিতে পারবো না বুঝি । * রাত্রে শোবার আগে স্ট্রর অনেক কথাই বললেন আমার কাছে। ভদ্রলোকের দু-বার খ্ৰীবিয়োগ হয়েচে—এই বয়সে সংসার শূন্ত, একটি মাত্র আট বছরের ছেলে আছে। বৃদ্ধ মায়ের কষ্ট আর চোখে দেখা যায় না। নিজের বয়স হয়েটে পয়ত্রিশ মাত্র। ভদ্রলোকের মন বুঝে বললুম—আপনার বিবাহ করা উচিত পুনরায়।