পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিযাত্রিক ৪৭৩ কিংবা যদি থাকতে মাঝে মাঝে শিমূল গাছ বা রক্তপলাশ, তবে ফাল্গুন মাসের প্রথমে ফুল ফুটলে এই অঞ্চল হয়ে উঠতে মায়াময় পরীরাজ্য। এই সব ভাবতে ভাবতে বেলা প্রায় পড়ে গেল। রোদ রাঙা হয়ে এসেচে। সেই সময় অপূর্ব দৃপ্ত। হঠাৎ আমি ঘোড়া থামিয়ে দাড়িয়ে পড়লুম। বহু দূরে, পশ্চিম দিক্‌চক্রবালের অনেকট জুড়ে কালো বনরেখা দেখা দিয়েচে । রেখা ক্রমে স্পষ্টত্তর হয়ে উঠলো, তখন বেলা নেই, সন্ধ্যার অন্ধকার নামলো। আমার সঙ্গীদের জিজ্ঞেস করলুম, ওই কি দারকেশা ? ওরা বললে, বন আরও অনেক দূরে, দারকেশা আর বেশি দূর নেই। একটা ছোট পাহাড়ের আড়ালে অনেকগুলো ঘরবাড়ি দেখা গেল, এভক্ষণ আমি লক্ষ্য করিনি। ওরা বললে—ওই দারকেশ । আমার বন্ধুটি এখানে কণ্টাক্টারি করেন। ছ পয়সা হাতে যে না করেচেন এমন নয় : অনেক দিন পরে একজন বাঙালী বন্ধু পেয়ে তিনি খুব খুশী। আমি রোজ সকালে উঠে বনের দিকে বেড়াতে যাই, কখনো ফিরি দুপুরে, কোনদিন সন্ধ্যাবেলা। বন্ধু বললেন—বনে যখন তখন অমন যেও না—বডড জন্তু-জানোয়ারের ভয়। -कि छखु ? —ভাল্লুক তো আছেই, বাঘ আছে, বুনো কুকুর আছে। দারকেশা একটি ছোট বস্তি । এর পশ্চিম দিকে চক্রবাল জুড়ে অরণ্যরেখা ও শৈলশ্রেণী। গ্রাম থেকে বনের দূরত্ব দু মাইলের বেশী নয় কিন্তু বন এখানে কোণাকুণি ভাবে বিস্তৃত, উত্তরপশ্চিম কোণ থেকে দক্ষিণ পশ্চিম কোণের দিকে চলে গেল লম্বা টানা বনরেখা ; যে জায়গাটা খুব নিকটে এসে পড়েচে, সেইটিই দু মাইল। বনের মধ্যে ছোট বড় চুনাপাথরের টিলা ও অঙ্গুচ্ছ শিলাখৃঙ্গ। এই বন তেমুন নিবিড় নয়। এক ধরনের শুভ্রকাও, বনস্পতিজাতীয় বৃক্ষ এই বনে আমি প্রথম দেখি । এর গুড়ি ও ডালপালা দেখলে মনে হবে কে যেন গাছের গায়ে পঙ্খের কাজ করেচে, চকচকে সাদা। গুড়ির গায়ে হাত দিলে হাতে খড়ির গুড়োর মতো এক প্রকার সাদা গুড়ে লেগে যায়, মুখে মাখলে পাউডারের কাজ করে। এই গাছের নাম রেখেছিলুম শিব গাছ। দ্বারকেশ একটা উচু পাথুরে-ডাঙার ওপর, তিনদিক থেকে ডাঙাটা নীচু হয়ে সমডল জমির সঙ্গে মিশেচে, ছোট একটি পাহাড়ী ঝরনা ডাঙার নীচে বয়ে যাচ্চে ঝিরঝির করে, ঝরনায় দুধারে ছোট ছোট গাছ ও এক প্রকারের লতার ফুল। এখানে ছত্রিশগড় রাজপুত অধিবাসীদের মধ্যে একজন ব্যবসায়ী আছে, সে আমার বন্ধুর অধীনে কাঠ ধোগানোর কাজ করেছিল অনেকদিন । লোকটার নাম মাধোলাল। আমি তার সঙ্গে অনেক সময় বসে বসে তাদের দেশ সম্বন্ধে গল্প করতুষ ।