পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Ꮡ8 বিভূতি-রচনাবলী –নির্ভাবনায় যান—এ লাইন খারাপ হয়েচে তার অনেক আগে। চক্ৰধরপুরে গিয়ে আবার মেন লাইনে উঠবেন। ট্রেন ছাড়লো। আমাদের ঘুম নেই উৎসাহে পড়ে। অনেক রাত পর্যন্ত সবাই মিলে বক্‌বক্ করচি। রাতে সাড়ে বারোটায় ট্রেন খড়গপুরে এলে আমরা চ খেলুম। খড়গপুরের লম্বা প্ল্যাটফর্মে পায়চারি করে বেড়ালুম। চমৎকার জ্যোৎস্না। শুক্ল ত্রয়োদশী তিথি। সামনে আসচে পূর্ণিমা। খড়গপুর ছাড়িয়ে জমির প্রকৃতি একেবারে বদলে গেল। রাঙা মাটি, উচুনীচু পাথুরে জমি, বড় বড় প্রান্তর—জ্যোৎস্নারাত্রে সে সব জায়গা দেখাচ্চে যেন ভিন্ন কোনো রহস্যময় জগৎ, আমাদের বহুদিনের পরিচিত পৃথিবী যেন এ নয়। যেন কোন অজানা গ্রহলোকে এসে পড়েচি—যেখানে প্রতিমুহূর্তে নব সৌন্দর্যের সন্তার চোখের সামনে উদঘাটিত হবার সম্ভাবনা। এ পথে আমার সঙ্গীরা কেউ কোনোদিন আসেনি। বিশেষ করে প্রমোদ ও পরিমল দুজনেই প্রকৃতিরসিক, তারা ঘুমোবার নামটি করে না। আমিও এ পথে একবার মাত্র এসেচি, তাও অন্ধকার রাত্রে, পথের বিশেষ কিছুই দেখিনি—সুতরাং আমিও জেগে বসে আছি। সর্ডিহা ছাড়িয়ে রেললাইনের দুধারে নিবিড় শালবন, বসন্তে শিমুল ফুল ফুটে আছে শালবনের মাঝে মাঝে—যদিও রাত্রে কিছু বোঝা যায় না, গাছটা শিমুল বলে চেনা যায় এই পর্যন্ত । গিডনি ছাড়িয়ে গেলে আমি বললুম—এইবার সব ঘুমিয়ে নাও—রাত একটা বেজে গিয়েচে–কাল পরশু কোথায় থাবো, কোথায় ঘুমুবো কিছুই ঠিক নেই। পথে বেরুলে শরীরটাকে আগে ঠিক রাখতে হবে। সারারাত্রি ট্রেন চললো। আমরা সবাই শুয়ে পড়লুম—কখন ষে ঘুম এলেচে, আর কিছুই জানি না। ফিরিওরালার চীৎকারে ঘুম ভেঙে দেখি ভোর হয়ে গিয়েচে । একটা বড় স্টেশনে ট্রেন দাড়িয়ে আছে—আর সামনের রাস্ত দিয়ে লম্বা মোটরের সারি ক্রমাগত স্টেশনের দিকে আসচে। তাঁর আগে কখনো টাটানগর দেখিনি—এ বনজঙ্গলের দেশে এত মোটর গাড়ির ভিড় ধখন, এ টাটানগর না হয়ে যায় না। আমার নিদ্ৰিত সঙ্গীদের ঘুম তখনও ভাঙেনি। আমি হাক দিয়ে বললাম—ও প্রমোদবাবু, ও কিরণ—যুমুতেই এসেচ কি শুধু পয়সা খরচ করে । উঠে টাটানগর দেখ–টাটানগর এসেচে— পরিমল উঠে চোখ মুছতে মুছতে বললে—কি স্টেশন এটা ? —টাটানগর। —চা পাওয়া যাচ্চে ঙো ? —অভাব কি। ওদের সব ঘুম ভাঙিয়ে দাও-চা ডাকি। প্রমোদবাৰু প্লাটফর্মে নেমে বললে—মারে এ টাটানগর কোথায়। লেখা আছে গিনি ማየማጓ !