পাতা:বিভূতি রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত Woo একদল ছেলে বাহির হইরা সিটি কলেজে ভর্তি হইতে চলিয়াছিল, তাহদের দলে মিশিয়া গিয়া কেরানীর নিকট হইতে কাগজ চাহিয়া লইয়া নাম লিখির ফেলিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাড়িটার গড়ন ও আকৃতি তাহার কাছে এত খারাপ ঠে ল যে, কাগজখানি ছিড়িয়া ফেলিয়া সে বাহিরে আসিয়া ছাপ ছাড়িয়া বাচিল । অবশেষে রিপন কলেজের বাড়ি তাহার কাছে বেশ ভাল ও উচু মনে হইল। ভর্তি হইয়া সে আর একটি ছাত্রের সঙ্গে ক্লাসরুমগুলি দেখিতে গেল। ক্লাসে ইলেকটিক পাখা। কি করিয়া খুলিতে হয় ? তাহার সঙ্গী দেখাইয়া দিল। লে খুশীর সহিত তাহার নীচে খানিকক্ষণ বসিয়া রহিল, এত হাতের কাছে ইলেকট্রিক পাখা পাইয়া বার বার পাখা খুলিয়া বন্ধ করিয়া দেখিতে লাগিল । অখিলবাবুদের মেসে থাকা ও পড়াশুনা দুইয়েরই ঘোর অসুবিধা । এক এক ঘরের মেজেতে তিনটি ট্রাঙ্ক, কতকগুলি জুতার বাক্স, কালি বুরুশ, তিনটি ছক । ঘরে আর কোন আসবাবপত্র নাই, রাত্রে আলো সবদিন জলে না। ঘর দেখিয়া মনে হয় ইহার অধিবাসীগণের জীবনে মাত্র দুইটি উদেন্ত আছে—অফিসে চাকরি করা ও মেসে আসিয়া খাওয়া ও ঘুমানো। এক এক ঘরে যে তিনটি বাবু থাকেন তাহারা ছাঁটার সময় অফিস হইতে আসিয়া হাতমুখ ধুইয়া যে ধার বিছানায় শুইয়া পড়িয়া চুপ করিয়া তামাক টানিতে থাকেন, একটু আধটু গল্পগুজব যা হয়, প্রায়ই অফিস সংক্রান্ত ; তারপরেই আহারাদ সাররা নিদ্রা। অখিলবাৰু কোথায় ছেলে পড়ান, অফিসের পর সেখান হইতে ফিরিতে দেরি হইয়া ধায় । তিনিও সারাদিন খাটুনির পর মেসে আসিয়া শুইয়া পড়েন। অপু এ রকম ঘরে এতগুলি লোকের সহিত এক বিছানায় কখনও শুইতে অভ্যস্ত নয়, রাত্রে তাহার যেন হাপ ধরে, ভাল ঘুম হয় না। অন্ত কোথাও কোন রকম মুবিধা না হইলে সে যাইবে কোথায় ? তাহা ছাড়া অপুর আর এক ভাবনা মায়ের জন্ত । স্কলারশিপ পাইলে সেই টাকা হইতে মাকে কিছু কিছু পাঠাইবার আশ্বাস সে আসিবার সময় দিয়া আসিয়াছে কিন্তু কোথায় বা স্কলারশিপ, কোথায় বা কি। মা'র কিরূপে চলিতেছে, দিন ধাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই ভাবনাই ভাহার আরও প্রবল হইল । মাসের শেষে অখিলবাবু অপুর জন্ত একটা ছেলে পড়ানো ঠিক করিয়া দিলেন, দুইবেল, একটা ছোট ছেলে ও একটি মেয়েকে পড়াইতে হইবে, মাসে পনেরো টাকা । অখিলবাবুর মেসে পরের বিছানায় শুইয়া থাকা তাহার পছন্দ হয় না। কিন্তু কলেজ হইতে ফিরিয়া পথে কয়েকটি মেসে জিজ্ঞাসা করিয়া জানিল, পনেরো টাকা মাত্র আয়ে কোনো মেসে থাকা চলে না। তাহার ক্লাসের কয়েকটি ছেলে মিলিয়া একখানা ঘর ভাড়া করিয়া থাকিত, নিজেরাই রাধিরা থাইত, অপুকে তাহারা লইতে রাজী হইল। যে তিনটি ছেলে একসঙ্গে ঘর ভাড়া করিয়া থাকে, তাহদের সকলেরই বাড়ি মুর্শিদাবাদ জেলায়। ইহাদের মধ্যে মুরেশ্বরের আর কিছু কেশী, এমএ ক্লাসের ছাত্র, চল্লিশ টাকার টিউশনি আছে। জানকী যেন কোথায় ছেলে পড়াইয়া কুড়ি টাকা পায় । নির্মলের আয় दि. ब्र २-é