পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

分8 বিভূতি-রচনাবলী ডুরিয়ান ফলের গাছ দেখা গেল। সে গাছেরও ফল পেকে যথারীতি দুৰ্গন্ধ বেরুচ্ছে। fবমল বললে—একটু সতর্ক থাকে । দেখা যাক না কি হয় ! সবুজ টিয়ার ঝাক গাছের ডালে ডালে উড়ে বসছে। একটা অপূৰ্ব্ব শাস্তি চারিদিকে – ওরা দুজনে ডুরিয়ান গাছের ছায়ায় শুকনো তালপাত পেতে বসে অপেক্ষা করতে লাগলো। নিউভিনও হয় নি, এমন সময় কিছুদূরে এক মাত্রাঙ্গী ও একজন চীনা ভদ্রলোককে ওদের দিকে আসতে দেখা গেল। সুরেশ্বর ও বিমল দু’জনেই উঠে দাড়ালো । ওরা কাছে এসে অভিবাদন করলে। মাদ্রাজী ভদ্রলোকটি অত্যন্ত স্বপুরুষ ও সুবেশ, তিনি বেশ পরিষ্কার ইংরেজীতে বললেন—আপনার ঠিক এসেছেন তাহলে। ইনি মি: আ-চিন্‌ স্থানীয় কনস্থলেট অপিসের মিলিটারী অ্যাটাসে। আমার নাম মুৰ্ব্বারাও। পরস্পরের অভিবাদন-বিনিময় শেষ হবার পর চারজনই সেই ডুরিয়ান গাছের তলায় বসলো। সমগ্র বোটানিকেল গার্ডেনে এর চেয়ে নিজন স্থান আছে কিনা সন্দেহ। স্বৰ্ব্বারাও বললেন—প্রথমেই একটা কথা জিগ্যেস করি –আপনার দুজনেই উপাধিধারী ডাক্তার তো ? সুরেশ্বর বললে, সে ডাক্তার নয়, ঔষধ-ব্যবসায়ী। বিমল পাশকরা ডাক্তার। এ কথার উত্তরে আ-চিন বললে—দুজনকেই আমাদের দরকার। একটা কথা প্রথমেই বলি, আমাদের দেশ ঘোর বিপন্ন। আমরা ভারতের সাহায্য চাই । জাপান অন্যায়ভাবে আমাদের আক্রমণ করছে, দেশে খাদ্য নেই, ওষুধ নেই, ডাক্তার নেই। আমরা গোপনে ডাক্তারি ইউনিট গঠন করে দেশে পাঠাচ্ছি। কারণ আইনত: বিদেশ থেকে আমরা তা সংগ্রহ করতে পারি না। আপনার বুদ্ধের দেশের লোক, আমরা আপনাদের মন্ত্রশিষ্য। আমাদের সাহায্য করুন। এর বদলে আমাদের দরিদ্র দেশ দুশে ডলার মাসিক বেতন ও অন্যান্য খরচ দেবে। এখন আপনার বিবেচনা করে বলুন আপনাদের কি মত? সুরেশ্বর বললে—যদি রাজী হই, কবে যেতে হবে। —এক সপ্তাহের মধ্যে। লুকিয়ে যেতে হবে, কারণ এখন হংকং যাবার পাশপোর্ট আপনারা পাবেন না। আমার গভর্নমেণ্ট সে ব্যবস্থা করবেন ও আপনাদের এখানে এই এক সপ্তাহ থাকার খরচ বহন করবেন। আপনার যদি রাজী হন, আমার গভর্নমেণ্ট আপনাদের কাছে চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকবেন। স্বৰ্ব্বা রাও বললেন–জবাব এখুনি দিতে হবে না। ভেবে দেখুন আপনারা। আজ সন্ধ্যাবেল জোহোর স্ত্রীটের বড় পার্কের ব্যাণ্ডস্ট্যাণ্ডের কাছে আমি ও অ-চিন থাকবে। কিন্তু দয়া করে কাউকে জানাবেন ন । ওরা চলে গেলে বিমল বল্লে—কি বল সুরেশ্বর, শুনলে তো সব ব্যাপার? স্বরেশ্বর বল্পে—চল যাই। এখন আমাদের বয়স কম, দেশবিদেশে যাবার তো এই সময় । একটা বড় যুদ্ধের সময় মেডিক্যাল ইউনিটে থাকলে ডাক্তার হিসেবে তোমারও অনেক জ্ঞান হবে। চীনদেশটাও দেখা হয়ে যাবে পরের পয়সায়।