পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sbr বিভূতি-রচনাবলী সুরেশ্বর বল্লে—ঝকমারি করেছি এসে, ভাই । না খেয়ে তো দেখছি আপাতত: মরতে হবে। তৃতীয় দিন দুপুরে দূরে দিথলয়ে একখানা বড় ষ্টীমারের ধোয়া দেখা গেল। ওরা দেখলে জাঙ্কের সারেঙ দুরবীন দিয়ে সেদিকে চেযে উদ্বিগ্ন মুখে কি আদেশ দিলে, মাঝিমাল্লারা পাল নামিয়ে ঘুরিয়ে দিচ্ছে। আবার উন্টোদিকে যাবে নাকি ? ব্যাপার কি ? সুরেশ্বর সারেঙকে জিগ্যেস করলে—নৌকা ঘোরাচ্ছ কেন ? সারেঙ দূরের অস্পষ্ট জাহাজটার দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে উদ্বিগ্ন মুখে বল্লে—ইংলিশ ক্রুজার, মিস্টার, ভেরি বিগ কুজার—বিগ, গান— সুরেশ্বর বল্লে—তাতে তোমার ভয় কি ? ওরা তোমাদের কিছু বলতে যাবে কেন ? কিন্তু সুরেশ্বর জানতো না সারেঙএর আসল ভয়ের কারণ কোনখানে। চীন সমুদ্রে চীনা বোম্বেটের উপদ্রব নিবারণের জন্যে ব্রিটিশ যুদ্ধ জাহাজ সর্বপ্রকার চীনা নৌকা, জাহাজ ও জাঙ্কের ওপর—বিশেষ করে বন্দর থেকে দূরে বার-সমূদ্র দিয়ে যে সব যায়—তাদের ওপর খরদৃষ্টি রাখে। ওদের জাঙ্ককে দেখে সন্দেহ হোলেই থামিয়ে খানাতল্লাস করবে। তা হোলে এ জাঙ্কে যে বেআইনি আফিম রয়েছে পাটাতনের নীচে লুকোনে—ত ধরা পড়ে যাবে। চীনা মাঝিগুলো অতিশয় ধূৰ্ত্ত। যুদ্ধজাহাজ দূর থেকে যেমনি দেখা, অমনি জাঙ্ক মাঝ সমুদ্রে ঝুপ করে নোঙর নামিয়ে দিলে ও পাটাতনের নীচে থেকে মাছ ধরার জাল বার করে সমুদ্রে ফেলতে লাগলো—দেখতে দেখতে জাঙ্কখানা একখানি চীনা জেলে-ডিঙিতে পরিবর্তিত হয়ে গেল । বিমল বল্লে—উঃ, কি চালাক দেখেছ ! সুরেশ্বর বল্লে—চালাক তাই রক্ষে—নইলে ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ এসে যদি আমাদের ধরতে— বিনা পাসপোর্টে ভ্রমণ করার অপরাধে তোমায় আমায় জেল খাটতে হবে, সে স্থ শ আছে ? ধূসরবর্ণের বিরাটকায় ব্রিটিশ ক্রুজারখানা ক্রমেন্ট নিকটে এসে পড়ছে। এখন তার বড় ফোকরওয়াল কামানগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সমুদ্রের বুকে একটা ধূসরবর্ণের পর্বত যেন ধীরে ধীরে জেগে উঠছে। যদি কোনো সন্দেহ করে একটি বড় কামান তাদের দিকে দাগে—অ'র ওদের চিহ্ন খুজে পাওয়া যাবে ? চীনা মাঝিমাল্লাগুলো মহা উৎসাহে ততক্ষণ জাল ফেলে মাছ ধরছে। সুরেশ্বর ও বিমলের বুক টিপ, টিপ করছে উদ্বেগে ও উত্তেজনায়। কিন্তু সৌভাগ্যের বিষয় যুদ্ধজাহাজখানা ওদের দিকে লক্ষ্যই করলে না। ওদের প্রায় একমাইল দূরে দিয়ে সোজা পূর্ণবেগে সিঙ্গাপুরের দিকে চলে গেল । জাঙ্ক মৃদ্ধ লোক হঁাপ ছেড়ে বঁচিলো । দুপুরের পরে দূরে একটি ছোট দ্বীপ দেখা গেল।