পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মরণের ডঙ্ক ৰাজে సిసి জাঙ্ক, গিয়ে ক্রমে দ্বীপের পাশে নোঙর করলে। বিমল ও স্বরেশ্বর শুনলে নৌকার জল ফুরিয়ে গেছে—এবং এখানে মিষ্ট জল পাওয়া যায়। ওরা সেখানে থাকতে থাকতে অীর একথান বড় জাঙ্ক বিপরীত দিক থেকে এসে ওদের কাছেই নোঙর করলে । বিমলদের জাঙ্কের মাঝিরা বেশ একটু ভীত হয়ে পড়লে নবাগত নৌকাখান দেখে। সকলেই ঘন ঘন চকিত দৃষ্টিতে সেদিকে চায়—যদিও ভযের কারণ যে কি তা সুরেশ্বর বা বিমল কেউ বুঝতে পারলে না। কিন্তু একটু পরে সেটা খুব ভাল করেই বোঝা গেল । ও নৌকা থেকে দশ-বারোজন গুগু ও বর্বর আরুতির চীনেম্যান এসে ওদের জাঙ্ক, ঘিরে ফেললে । সকলের হাতেই বন্দুক, কারে। হাতে ছোরা। ওদের জাঙ্কের কেউ কোনো রকম বাধা দিলে না—দেওয়া সম্ভবও ছিল না। দস্থ্যর দলে ভারী, তাছাড়া অভ্যত বন্দুক এ নৌকায় ছিল না। সকলের মুখ বেঁধে ওরা নৌকায় যা কিছু ছিল, সব কেড়ে নিয়ে নিজেদের জাঙ্কে ওঠালে। বিমল ও স্বরেশ্বরের কাছে যা ছিল, সব গেল। অা-চিন প্রদত্ত একশো ডলারের নোট খান। পর্য্যস্ত—কারণ সেখানা ভাঙাবার দরকার না হওয়ায় ওদের বাক্সেই ছিল । - চীন সমুদ্রের বোম্বেটের উপদ্রব সম্বন্ধে বিমল ও স্বরেশ্বর অনেক কথা শুনেছিল। সিঙ্গাপুরে আরও শুনেছিল যে জাপানের সঙ্গে যুদ্ধ আসন্ন হওয়ায় সমস্ত নৌকো-জাহাজ হংকংএর নিকটবর্তী সমুদ্রে জড় হচ্ছে—এদিকে স্বতরাং বোম্বেটেদের মহেন্দ্রক্ষণ উপস্থিত। চীনা ও মালয় জলদস্থ্যরা শুধু লুঠপাট করেই ছেড়ে দেয় না—ষাত্রীদের প্রাণ নষ্টও করে। কারণ এরা বেঁচে ফিরে গিয়ে অত্যাচারের সংবাদ সিঙ্গাপুর বা হংকংএ প্রচার করলেই চীন ও ও ব্রিটিশ গবর্নমেণ্ট কড়াকড়ি পাহারা বসাবে সমুদ্রে । ‘মর মানুষ কোনো কথা বলে না”— এ প্রাচীন নীতি অনেক ক্ষেত্রেই বড় কাজ দেয়। দেখা গেল বর্তমান দস্থ্যরা এ নীতি ভাল ভাবেই জানে। কারণ জিনিসপত্র ওদের জাঙ্কে রেখে এসে ওরা আবার ফিরে এল বিমলদের নৌকায়—যেখানে পাটাতনের ওপর মাঝিমাল্লার দল সারি সারি মুখ ও হাত-পা বাধা অবস্থায় পড়ে আছে। বিমল ছিল নিজের কামরায় । সুরেশ্বর কোথায় বিমল তা জানে না। একজন বদমাইসকে ছোর হাতে ওর কামরায় ঢুকতে দেখে বিমল চমকে উঠলো। লোকটা সম্ভবতঃ চীনাম্যান। বয়স আন্দাজ ত্রিশ, সার্কাসের পালোয়ানের মত জোয়ান— নীল ইজের আর একটা বুক কাটা কোৰ্ত্ত গায়ে। মুখখান দেখতে খুব কুত্র নয়, কিন্তু কঠিন ও নিষ্ঠুর। ওর হাতে অস্ত্রখানা বিমল লক্ষ্য করে দেখলে ঠিক ছোরা নয়, মালয় উপদ্বীপে ষাকে "ক্রিস’ বলে তাই। যেমনি চকৃচকে তেমনি সেখান ক্ষুরধার বলে মনে হোল ! সে ক্রিস্খানা বিমলের সামনে উচু করে তুলে ধরে দেখিয়ে বল্লে—আমি তোমাকে একটু বিরক্ত করতে এসেছি, কিছু মনে করো না।