পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

e: বিভূতি-রচনাবলী সেখানে আপনাদের নামিয়ে দেবার আদেশ আছে আমার ওপর। হংকং-এর কাছে গেলে বৃটিশ মানোয়ারী জাহাজ আমাদের নৌকো তল্লাস করবে। তোমরা ধরা পড়ে যাবে মিস্টার। পরদিন দুপুরের পরে ইয়ান-চাউ পৌছে গেল ওদের নৌকো। ক্ষুদ্র দ্বীপ। আগাগোড়া দ্বীপটি যেন একটা ছোট পাহাড়, সমুদ্রের জল থেকে মাথা তুলে জেগে রয়েছে। এখানে চীন গবর্নমেন্টের একটা বেতারের স্টেশন আছে। সমস্ত দ্বীপে আর কোন অধিবাসী নেই। ঐ বেতারের স্টেশনের জনকয়েক চীন। কৰ্ম্মচারী ছাড়া । দুদিন ওরা সেখানে বেতারের আড়ায় কৰ্ম্মচারীদের অতিথি হয়ে রইল। তৃতীয় দিন খুব সকালে ক্ষুত্র একখানা জাঙ্কে ওদের দশ মাইল দূরবর্তী উপকূলে নিয়ে যাওয়া হোল। বেতারে এই রকম আদেশই নাকি এসেছে। এই চীন দেশ ! যদি ঢেউ-খেলানো ছাদ-আঁাটা চীনা বাড়ী না থাকতো, তবে চীন দেশের প্রথম দৃশুট বাংলা দেশের সাধারণ দৃশু থেকে পৃথক করে নেওয়া হঠাৎ যেতো না। উপকূল থেকে পাচ মাইল দূরে রেলওয়ে স্টেশন। অতি প্রচণ্ড কড়া রেীত্রে পদব্রজেই ওদের স্টেশনে আসতে হোল। এদেশে ওদের জামাই-অাদরে কেউ রাখবে না, কঠিন সামরিক জীবন যে এখন থেকেই শুরু হোল ওদের—এ কথাটা সুরেশ্বর ও বিমল হাড়ে হাড়ে বুঝলে সেই ভীষণ রোদে বিত্র ধুলোভর রাস্ত বেয়ে হাটতে হাটতে। তার ওপর বেতারের কৰ্ম্মচারীটি ওদের সঙ্গে ছিল, তার মুখেই শোনা গেল এ সব অঞ্চল আদেী নিরাপদ নয়। দেশের রাজনৈতিক অবস্থার গণ্ডগোলের সুযোগ নিয়ে চোর ডাকাত ও গুণ্ডার দল যাখুশি শুরু করেছে। তারা দিনদুপুরও মানে না। স্বদেশী বিদেশীও মানে না। কারো ধন-প্রাণ নিরাপদ নয় আজকাল। দেশ একপ্রকার অরাজক । শীঘ্রই এর একটা প্রমাণ পাওয়া গেল পথের মধ্যেই। ওরা একদলে অাছে মাত্র চারজন । রৌদ্রে সুরেশ্বরের জল-তেষ্ট পেয়েছিল-চীনা কৰ্ম্মচারীটিকে ও ইংরাজীতে বল্লে-জল কোথাও পাওয়া যাবে ? রাস্তা থেকে কিছু দূরে একটা ক্ষুদ্র গ্রাম বা বস্তি। থানকতক খড়ের ঘর এক জায়গায় জড়ো করা মাত্র। সেই চীনা কৰ্ম্মচারীর পিছু পিছু ওরা বস্তির দিকে গেল। বিমলের মনে হোল একবার বৈদ্যবাটর গঙ্গার চরে সে তরমুজ কিনতে গিয়েছিল-এ ঠিক যেন বৈদ্যবাটীর চড়ার চাষী-কৈবৰ্ত্তদের গা-খানা। একখানা গরুর গাড়ী সামনেই ছিল—তফাতের মধ্যে চোখে পড়লো সেটার গড়ন সম্পূর্ণ অন্য ধরণের। গরুর গাড়ীর অত মোট চাকা বাংলাদেশে হয় না। ওদের আসতে দেখেই কিন্তু বস্তির মধ্যে একটা ভয় ও আতঙ্কের স্বষ্টি হোল। মেয়ে পুরুষ যে-যার ঘর ছেড়ে ছুটে বেরুলো—এদিক ওদিক দৌড় দিল। চীনা কৰ্ম্মচারীও তৎপর কম নয়—সেও ছুটে গিয়ে একটি ধাবমান স্ত্রীলোকের পথ আগলে দাড়ালো।