পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মরণের ডঙ্কা বাজে 0 9 স্ত্রীলোকটি দুহাতে মুখ ঢেকে মাটিতে বসে পড়ে জড়সড় হয়ে আৰ্ত্তনাদ করে উঠলো। ব্যাপারটা কি ? সুরেশ্বর ও বিমল অবাক হয়ে গিয়েছে। স্ত্রীলোকের বিপন্ন কণ্ঠের আর্তনাদ বিমল সহ করতে পারলে না। ও চেচিয়ে বল্লে— ওকে কিছু ব'লো না, মি: চংপে—- ততক্ষণ ওদের সঙ্গী চীনা ভাষায় কি একটা বল্পে স্ত্রীলোকটিকে । কথাটা এই রকম শোনাল ওদের অনভ্যস্ত কানে । —হি চিন্‌-কিচিন্‌—চিন-চিন্‌ — স্বীলোকটি মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে ওর দিকে ভয়ে ভয়ে চেয়ে বল্লে—ই চিন, কি চিন, সি চিন— —কি চিন, ফি চিন ? —সি চিন, লি চিন । স্বরেশ্বর ও বিমল ওদের কথা শুনে হেসেই খুন। কথাবাৰ্ত্তাগুলো যেন ঐ রকমই শোনাচ্ছিল । তারপর ওরা স্ত্রীলোকটির কাছে পায়ে পায়ে গেল। আহা, যেন মূতিমতী দারিদ্র্যের ছবি ! ভারতবর্ষীয় লোকে তবুও স্নান করে, গায়ে মাথায় তেল দেয়, এরা তাও করে না—গায়ে খড়ি উড়ছে, মাথা রুক্ষ, শরীর অন্নাভাবে শীর্ণ ও জ্যোতিহীন। হতভাগ্য মহা চীন, হতভাগ্য ভারতবর্ষ ! দুজনেই দরিদ্র, কেউ খেতে পায় না,—গুরু শিষু দুজনের অবস্থাই সমান। বিমলের মনে মনে এই দরিদ্র। নারী,—এই দরিদ্র, হতভাগ্য, উৎপীড়িত মহা চীনের এই ভয়াৰ্ত্ত, অসহায় কুঁড়েঘরবাসী চাষীমজুর—এদের প্রতি একটা গভীর অনুকম্প ও সহানুভূতি জাগলো। মানুষ যখন দুঃখকষ্ট পায়, সব দেশে সৰ্ব্বকালে তারা এক। চীন, ভারতবর্ষ, রাশিয়া, আবিসিনিয়া, স্পেন, মেক্সিকো, এদের মধ্যে দেশের সীমা এখানে মুছে গিয়েছে। এই অভাগিনী ভয়ব্যাকুলা দরিদ্র নারী সমগ্র চীন দেশের প্রতীক। বিমল এসেছে এক হতভাগ্য দেশ থেকে—এই হতভাগ্য দেশকে সাহায্য করতে। সে ত৷ যথাসাধ্য করবে। দরকার হোলে বুকের রক্ত দিয়েও করবে। স্ত্রীলোকটি যখন বুঝতে পারলে যে এর ডাকাত নয় বা বিদ্রোহী রেড আর্মির লোকও নয়, তখন সে উঠে ঘরে গিয়ে জল নিয়ে এসে সবাইকে পাওয়ালে । ধাতুপাত্র বা চীনা মাটির পাত্র নেই বাড়ীতে, এত গরীব সাধারণ লোক। লাউয়ের খোলায় জল রেখেছে। চীনের বিশ্ববিখ্যাত মাটির বাসন, মিং রাজত্বের অপূৰ্ব্ব প্রাচীন শিল্প, পুতুল, খেলনা, বুদ্ধ, দানব, এসব এই গরীবদের জন্যে নয়। রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে খুব ভিড়। একখানা সৈন্যবাহী ট্রেন সিন্‌কিউ থেকে সাংহাই যাচ্ছে—প্রত্যেক স্টেশনে আবার নতুন ভৰ্ত্তি-করা সৈন্যদের ওই ট্রেনেই উঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।