পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মরণের ডঙ্কা বাজে Y et বেগ হঠাৎ বড় বেড়ে গেল। সকলেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে, পরস্পরের মুখের দিকে চাইছে। কিন্তু এরোপ্লেনের সারি ট্রেনের ঠিক ওপর দিয়েই উড়ে চলে গেল শান্তভাবেই। প্রোফেসর লি দিবি নিব্বিকার ভাবেই বসে ছিলেন। তিনি বল্লেন—আমাদের গভর্নমেণ্টের এরোপ্লেন । একটা স্টেশনে প্ল্যাটফর্ম থেকে নারীকণ্ঠের কান্না শুনে বিমল ও সুরেশ্বর মুখ বাড়িয়ে দেখলে, কতকগুলি সৈন্য একটি দরিদ্র। স্ত্রীলোকের চারিধারে ঘিরে হাসছে—স্ত্রীলোকটির সামনে একটা শূন্য ফলের ঝুডি—এদিকে সৈন্যদের প্রত্যেকের হাতে এক একটা খরমুজ । বিমল বল্লে—প্রোফুেসর লি, আমরা তো নতুন এদেশে এসেছি, কিছু বুঝি নে এ দেশের ভাষা। বোধ হয় খরমুজওয়ালীর সব ফল এর কেড়ে নিয়ে দাম দিচ্ছে না। আপনি একবার দেখুন না । বৃদ্ধ তার এগারোটি ছাত্র নিয়ে প্ল্যাটফর্মে গিয়ে বাধা দিলেন সৈন্যদের। চীনা ভাষায় তুবড়ি ছুটলো উভয় পক্ষেই। বৃদ্ধের ছাত্রগণও তৈরী হয়ে দাড়িয়ে আছে, দরকার হোলে মারামারি করবে। মারামারি একটা ঘটতে হয়তো, কিন্তু সেই সময় জনৈক চীনা সামরিক অফিসার গোলমাল দেখে সেখানে উপস্থিত হতেই সৈন্যরা খরমুজ রেখে যে যার কামরায় উঠে বসলো। খরমুজওয়ালী গোটাকতক ফল লি ও তার ছাত্রদের খেতে দিলে-বৃদ্ধ তার দাম দিয়ে দিলেন, খরমুজওয়ালীর প্রতিবাদ শুনলেন না । সন্ধ্যার সময় ট্রেন ফু-চু পৌছুলো । ফু-চু থেকে অনেকগুলি সৈন্য উঠলো। ট্রেন কিন্তু ছাড়তে চায় না—খবর পাওয়া গেল, সামনের রেলপথে কি একটা গোলমালের দরুন ট্রেন ছাড়বার আদেশ নেই । . এ দেশে সময়ের কোনো মূল্য নেই। চার পাঁচ ঘণ্টা ওদের ট্রেনখানা প্ল্যাটফর্মের ধারে দাড়িয়ে রইল। সৈন্যদল নেমে যে যার খুশিমত স্টেশনে পায়চারি করছে, তারের বেড়া ডিঙিয়ে ওপাশের বাজারের মধ্যে ঢুকে হল্লা করছে, খাচ্ছে দাচ্ছে বেড়াচ্ছে। একটা ছোট ছেলে তারের একরকম যন্ত্র বাজিয়ে গাড়ীতে গাড়ীতে ভিক্ষা করে বেড়াচ্ছিল। প্রোফেসর লি তাকে ডেকে কি জিগ্যেস করলেন, তাকে কিছু খাবার দিলেন। তারই মুখে বিমল ও স্বরেশ্বর শুনলে ছেলেটি অনাথ, স্থানীয় আমেরিকান মিশনে প্রতিপালিত হয়েছিল—এখন সেখানে আর থাকে না। সন্ধ্যার আগে ট্রেন ছাড়লো। সারা রাতের মধ্যে যে কত স্টেশন পার হোল, কত স্টেশনে বিনা কারণে কতক্ষণ ধরে দাড়িয়ে রইল—তার লেখাজোখা নেই। এই রকম ধরনের রেলভ্রমণ বিমল ও স্বরেশ্বর কখনো করেনি। ভোরের দিকে ট্রেনথানা এক জায়গায় হঠাৎ দাড়িয়ে পড়লো। বিমল যুমুচ্ছিল—বাকুনি খেয়ে ট্রেনখানা দাড়াতেই ওর ঘুম ভেঙে গেল। জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে বিমল দেখলে দুধারের মাঠে ঘন কুয়াশা হয়েছে, দশহাত দূরের জিনিস দেখা যায়