পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১১২ বিভূতি-রচনাবলী থেকে লম্বা পাল্লার কামানে গোলাবর্ষণ শুরু করবে অাজ সন্ধ্যার সময়ে—সেই সঙ্গে জাপানী উড়ো জাহাজও যোগ দেবে বোমা ফেলতে। —ধন্যবাদ। আমরা একটু ঘুরে এখুনি চলে আসবে। so একথা বল্পে এ্যালিস্—কাজেই বিমল বা সুরেশ্বর কিছু বলতে পারলে না। শহরের মধ্যে এসে দেখলে, পুলিস সকলের হাতে চীনা ভাষায় মুদ্রিত এক এক টুকরো কাগজ বিলি করছে। চীন ছাত্রদের একটা লম্বা দল পতাকা উড়িয়ে মুখে কি বলতে বলতে শোভাযাত্রা করে চলেছে। সাংহাই অতি প্রকাণ্ড শহর। এত বড় শহর বিমল দেখে নি—ম্বরেশ্বর ও না। কলকাত এর কাছে লাগেই না। * চীনাপল্লীর নাম চা-পেই। সে জায়গাটায় রাস্তাঘাট কিন্তু অপরিদর নয়—তবে বড় ঘিঞ্জি বসতি। প্রত্যেক মোড়ে খাবারের দোকান, ছোট বড় ইদুর ভাজা ঝুলছে। বঁাকে করে ফিরিওয়ালা ভাত তরকারী বিক্রী করছে । বিমলের ভারী ভালো লাগলে এই চীনাপাড়ার জীবনস্রোত। এক জায়গায় একটা বুড়ী বসে ভিক্ষে করচে – টাকা-পয়সার বদলে সে পেয়েছে ভাত তরকারী, ওর মুখে এমন একটি উদারভালবাসার ভাব, চোখে সন্তোষ ও তৃপ্তির দৃষ্টি। বোধ হয় আশাতীত ভাত তরকারী পেয়েছে বলে এত খুশী হয়ে উঠেছে মনে মনে। প্রাচ্য-ভূখণ্ডের দারিদ্র্য ও সহজ সরল সন্তোষের ছবি যেন এই বৃদ্ধ ভিখারিণীর মধ্যে মূৰ্ত্তি পরিগ্রহ করেছে। হঠাৎ আকাশে কি একটা অদ্ভুত ধরণের শব্দ শুনে ওরা মুখ তুলে চাইলে। একটা চাপ৷ সো-ও-ও’ শব্দ। মিনি সৰ্ব্বপ্রথমে বলে উঠল—এ শেলের শব্ব ! সৰ্ব্বনাশ, এ্যালিস চলো আমরা ফিরি -জাপানী যুদ্ধজাহাজের কামান থেকে শেল ছুড়ছে! দুম্! দুম্!—দূরে অস্পষ্ট কামানের আওয়াজ শোনা গেল। কাছেই কোথায় একটা ভীষণ বিস্ফোরণের আওয়াজ হোল সঙ্গে সঙ্গে। লোকজন চারিধারে ছুটতে লাগলো—ওরাও ছুটলে তাদের পিছু পিছু। বসতি যেখানে খুব ঘিঞ্জি, সেখানে একটা বাড়ীতে গোলা পড়েছে। বাড়ীটার সামনের অংশ হুম্ড়ি খেয়ে পড়েছে—ইট, চু৭, টালিতে সামনের রাস্তাটা প্রায় বন্ধ—কে মরেছে না মরেছে বোঝা যাচ্ছে না, সেখানে লোকজনের বেজায় ভিড় । আবার সেই রকম ‘সো—সো—ও–ও’ শব্দ ! কাছেই অার একটা জায়গায় গোলা পড়লো। সঙ্গে সঙ্গে আকাশে সারবন্দী একদল এরোপ্লেন দেখা গেল। তারা অনেক উচু দিয়ে যাচ্ছে, পাছে চীনা বিমানধ্বংসী কামানের গোলা খেতে হয় এই ভয়ে। এ্যালিস্ বল্লে—ওরা পাল্লা ঠিক করে দিচ্ছে যুদ্ধজাহাজের গোলন্দাজদের। চলে এখানে আর থাকা নয়—এই চীনা পাড়াটা ওদের লক্ষ্য। কিন্তু ওদের যাওয়া হোল না। এ্যালিসের কথা শেষ হোতে না হোতেই, যেন একটা ভীষণ ভূমিকম্পে, পায়ের তলায় মাটি দুলে উঠল এবং একসঙ্গে দু'তিনটি শেলের বিস্ফোরণের