পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মরণের উল্কা বাজে ১২৩ এ্যালিস বল্লে—যুদ্ধের খবর কি ? তারপর সবাই মিলে ঝুকে পড়ে কাগজখানা পড়ে দেখতে লাগলো। শেনস্থ প্রাচীরের কাছে জাপানী সৈন্য চীনাদের কাছে ধাক্কা খেয়ে হটে গিয়েছে। জাপানীদের বহু সৈন্য মারা পড়েছে। স্বরেশ্বর বল্লে—সৰ্ব্বৈব মিথ্যা। জাপানীরা জিতছে। ভুল খবর দিচ্ছে আমাদের, পাছে শহরে আতঙ্ক উপস্থিত হয়। দেখছে না বোমা ফেলবার কাণ্ড ? চীনারা জিতছে । ফু— ওদের অত্যন্ত আশ্চর্য মনে হোল, মাত্র তিন মাইল দূরে শেনস্থ প্রাচীরের কাছে যুদ্ধ চলছে, অথচ ওদের খবুরের কাগজ পড়ে জানতে হচ্ছে যুদ্ধের ফলাফল, যেমন কলকাতায় বসে বা আমেরিকায় বসে লোকে জেনে থাকে। তিন মাইল দূরে থেকেও বোঝবার কোনো উপায় নেই যুদ্ধের আসল খবরটা কি। চীনা সামরিক কর্তৃপক্ষ যে সংবাদ পাঠাচ্ছে সেই সংবাদই ছাপা হচ্ছে। এই রকমই হয় সৰ্ব্বত্রই, অথচ খবরের কাগজের পাঠকেরা তা জেনেও জানে না। খবরের কাগজে লিখিত সংবাদ বাইবেল বা পুরাণের মত অভ্রান্ত সত্য হিসেবে মেনে নেয়, এইটেই আশ্চৰ্য্য। এ সম্বন্ধে ওদের অভিজ্ঞতা আরও পরে যা হয়েছিল তা আরও অদ্ভুত। কাগজের এক কোণে একটি সংবাদের দিকে ওদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করলে। মার্শাল চিয়াং কৈ শাকৃ চা-পেই পল্লীর বোমাবিধ্বস্ত অঞ্চল পরিদর্শনে আসবেন রাত ন’টার সময়ে। মিনি হাতঘড়ি দেখে বল্লে—এখন পৌনে ন’ট। বিমল বল্পে তা হোলে হাসপাতালেও যাবেন, চল আমরা হাসপাতালে ফিরি। মাশাল চিয়াংকে কখনও দেখি নি, দেখা যাবে এখন ! এমন সময় ওদের সামনের রাস্তায় একটা হৈ-চৈ উঠলো। রাস্তার দুধারে লোকজন সারবন্দী হয়ে দাড়িয়ে গেল। চীন| পুলিসমনি রাস্তার মাঝখানের লোক হটিয়ে দিলে । এক মিনিটের মধ্যে পর পর ছ’খানা মোটরকার দ্রুত বেগে বেরিয়ে গেল। রাস্তার জনতা চীনা ভাষায় চীৎকার করে বলে উঠলো।–“মহাচীনের জয় ! মার্শাল চিয়াংএর জয় । টেন্থ রুঢ় আমির জয় !’ এ্যালিস বল্পে—এই মার্শাল চিয়াং গেলেন ! বিমল বল্লে—তবে অার হাসপাতালে এখন ফিরে কি হবে ? চল কনশেসনে ফিরি। রাত হয়েছে, এ অঞ্চল এখন রাত্রে বেড়াবার পক্ষে নিরাপদ নয়। জাপানী বোমা তো আছেই, তা ছাড়া তার চেয়েও খারাপ চীনা দস্থ্যদের উপদ্রব। সঙ্গে মেয়ের'— স্বরেশ্বর বল্লে—তা ছাড়া ঘুমুতেও তো হবে। কাল সকাল থেকে আবার ডিউটি— যেখানে বাঘের ভয়, সেখানেই সন্ধ্যা হয়। কন্‌শেসনে ফিরবার পথে ওদের এক বিপদ ঘটলো। কন্‌শেসনে ফিরবার পথে ওরা চ্যাং সে লীন এ্যাভিনিউ দিয়ে খানিকট এসে পড়লে একটা জনবহুল পাড়াতে। সেখানে দু’খানা রিকশাভাড়া করে ওরা তাদের কন্‌শেসনে যেতে