পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৩e বিভূতি-রচনাবলী আলো সাংহাইয়ের পুলিস মার্শালের আদেশ মানে নি—জাপানী বোমারু প্লেনগুলোর শব্দ মাঝে মাঝে শোনা যাচ্ছিল, তাও সব সময় নয়। মাঝে মাঝে যেন সেগুলো কোন দিকে চলে যায়, আবার খানিক পরে মাথার ওপরে আসে । বিমল ভাবছিল, জাপানী বম্বার থেকে আর বোমা ফেলছে না তো ! স্বরেশ্বরকে কথাটা বলতে সে বল্লে—ব্ল্যাক-আউটের জন্তে নিশ্চয়। সবাই লুকিয়েছে। রাস্তাঘাটে জনপ্রাণী নেই। কোনো দিকে কোনো শব্দ আছে ? দুজন চীনা পুলিস বল্লে—তোমরা বোঝ নি মিস্টার। ওরা বোমা ফেলবে না, এখন সুবিধে খুজিছে হাই এক্সপ্লোসিভ বোমা ফেলবার। সেই বোমা ফেলে লোকদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার পরে, যেমন সব ভয়ে রাস্তাঘাটে বেরুবে কি পালাতে যাবে, অমনি গ্যাসের বোমা ফেলবে। এখন গ্যাসের বোমা ফেল্লে তো মাতুষ মরবে না, কারণ সব ঘরের মধ্যে জানলা দরজার আড়ালে আশ্রয় নিয়েছে। সেখান থেকে ওদের আগে বার করবে রাস্তায়—পরে সঙ্গে সঙ্গে গ্যাসের বোমা ছাড়বে, এ-ই করে আসছে দেখছি আজ ক'দিন থেকে— একটু পরে কন্‌শেসনের পুলিস এলো, চীনা পুলিসের ডেপুটি মার্শাল স্বয়ং এলেন বহু লোকজন নিয়ে । ওদের দিয়ে চণ্ডুর ও জুয়াড়ীদের আড্ডার ছোট্ট উঠানটা ভরে গেল। ডেপুটি মার্শাল বল্লেন—শহরে ব্ল্যাক আউট, ঘুটঘুটে অন্ধকার চারিধারে—এক্ষুনি জাপানীরা হাইএক্সপ্লোসিভ বম্ব, ফেলবে, তারপরে ফপেন্‌ গ্যাসের বোমায় বিষ ছাড়বে। এ অবস্থায় কি করা যায় ? মেয়ে দুটিকে কোথায় আটকে রেখেছে, কি করে খুজি ? কনশেসন পুলিসের কৰ্ম্মচারীরা বল্পেন—আপনার এলাকায় যত বদমাইশের আডড আছে, সব হানা দিই চলুন। –কিন্তু তাতে সময় নেবে। এখুনি যে সব ছত্রাকার হয়ে চারিদিকে ছুটে বেরিয়ে পড়বে। দেখছেন না ওপরকার অবস্থা ? ওদের প্ল্যান ঠিক করে নিতে যা দেরি । আচ্ছা, দেখি কতদূর কি হয়। মেয়ে দুটিকে গুণ্ডারা আটকে রেখেছে, মুক্তিপণ আদায় করার উদেখে। স্বতরাং তাদের প্রাণের ভয় বৰ্ত্তমানে নেই একথা ঠিকই। সাংহাইতে এ রকম অনবরত হচ্ছে। এই ভদ্রলোক দুটি এত রাতে মেয়েদের নিয়ে চা-পেই পল্লীতে বেরিয়ে বড় বিবেচনার অভাব দেখিয়েছেন। যত গুগু আর বদমাইশের আডড এই পাড়ায় । পুলিসের লিস্ট দেখে কাছাকাছি ছুটি বদমাইশের আড়ায় হানা দেওয়া হোল—কিন্তু কোথাও কিছু সন্ধান মিললো না। তারপর— রাত তখন দেড়টা—এমন এক ভীষণ ব্যাপারের স্থত্রপাত হয়ে গেল যে, এর আগে যে সব বোমা ফেলার কাণ্ড সুরেশ্বর ও বিমল দেখেছে—এর কাছে সেগুলো সব একেবারে মান হয়ে নিম্প্রভ হয়ে মুছে গেল। বিমল আর সুরেশ্বরের মনে হোল, আকাশ থেকে চারিধারে একসঙ্গে যেন দেবরাজ ইন্দ্রের বজ্র পড়তে শুরু হয়েছে—অসংখ্য । অনেক, অনেক—গুনে শেষ করা যায় না ! সঙ্গে