পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মরণের ডঙ্কা বাজে ১৩৫ বেরিয়েছি, দেখি যদি কিছু করতে পারি ; আমার মেয়ের কোথায় ? এই সৌম্যদর্শন, পরহিতব্ৰতী বৃদ্ধের স্নেহ-সম্ভাষণে বিমলের মন আর্দ্র হয়ে উঠলো। বল্পে —সে অনেক কথা । আমার মনে হয় আপনি এবং আপনার দলই এ বিষয়ে আমায় সাহায্য করতে পারবেন। প্রোফেসর লি হাসিমুখে বল্লেন—যুদ্ধের সময়কার মনস্তত্ত্ব আলোচনা করতে এসেছিলুম জানেন তা ? এর চেয়ে উপযুক্ত ক্ষেত্র আর কোথায় পাবো সে আলোচনার ? হঠাৎ একটা প্লেন মাথার ওপর এল । সবাই কথা বন্ধ করে ওপর দিকে চাইলে । মার্কিন পুলিশম্যানুটি চেচিয়ে উঠল—কভার । কভার ! কোথায় আর আশ্রয় নেবে, সেই ভাঙা বাড়ীর ইটকাঠের মধ্যে মুখ গুজে থাকা ছাড় । সবাই সেই দিকে ছুটলো। বিমলও চীনা খুকীটার হাত ধরে টেনে নিয়ে চললে সেই দিকে। প্লেন থেকে বোমা পড়ল না । পড়লো কতকগুলো চকচকে রূপোর বাতিদানের মত লম্ব। লম্বা জিনিস। প্লেনটা চলে গেলে ওরা সেগুলো দূর থেকে ভয়ে ভয়ে দেখলে। সরু সরু রূপোর নলের মত জিনিস, হাত খানেক লম্বা। ঝকৃবাকে সাদা । মাকিন পুলিশম্যান একটা হাতে তুলে নিয়ে বল্লে—ইনসেনডিয়ারি বস্থ –আগুন লাগাবার বোমা—এলুমিনিয়ম আর ইলেক্ট্রনের খোল, ভেতরে এলুমিনিয়ম পাউডার আর আয়রন অক্সাইড ভৰ্ত্তি। এই দেখ ছটা করে ফুটো টিউবের গোড়ার দিকে। এই দিয়ে আগুনের ফুলকি বার হয়ে আসবে। এ আগুন নিবোনা যায় না। জাপানীদের মতলব এবার স্পষ্ট বোঝা গেল। হাই এক্সপ্লোসিভ বোমা ফেলবার পর লোকজন ভয়ে দিশেহারা হয়ে যে যেদিকে পালাবে, তখন ওরা শহরে ইনসেনডিয়ারি বম্ব, ফেলে আগুন লাগিয়ে দেবে, আগুন নিবোতে কে এগোবে তখন । কি ভীষণ ধ্বংসের আয়োজন ! বিমল সেই বাকৃঝকে পালিশ করা সরু টিউবট হাতে নিয়ে শিউরে উঠলো। এই টিউবের মধ্যে স্বপ্ত অগ্নিদেব এখুনি জেগে উঠে এই এত বড় সাংহাই শহরটা জালিয়ে পুড়িয়ে দেবে, তারই আয়োজন চলছে। মাকিন পুলিশম্যানটি বল্পে -পয়ষট্টি গ্রাম এলুমিনিয়াম পাউডার আর পয়ত্রিশ গ্রাম আয়রন অক্সাইড। অামাদের মার্কিন নৌবহরের উড়োজাহাজে আজকাল এর চেয়েও ভালো বোমা তৈরী হচ্ছে—আয়রন অক্সাইডের বদলে দিচ্ছে— কাছেই আরও দু তিনটা রূপোর বাতিদান পড়লো। দিনের বেলায় ওরা পরস্পরের ধুলো কাদা মাথা চেহারা দেখে অবাক হয়ে গেল। প্রোফেসর লি তখনও কাজে ব্যস্ত, চারিদিকে ধ্বংসস্তুপ থেকে লোকজন টেনে বার করে বেড়াচ্ছেন, তিনি আর তার ছাত্রের। পুলিশও এসেছে, দুটো রেড, ক্রসের হাসপাতাল গাড়ীও এসেছে। আকাশে জাপানী বোমারু প্লেনগুলোর চিহ্ন নেই । রাত্রিটা কেটে গিয়েছে যেন একটা দুঃস্বপ্নের মত। বেলা এখন দৃশটী—এখনও সে