পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S89 বিভূতি-রচনাবলী জাপানী সৈন্যরা গ্রামখানাকে আগে চুপি চুপি গোল করে ঘিরে ফেল্পে। গ্রামে অনেকগুলো সাদ। সাদা খোলার ঘর, খড়ের ঘর। শস্তের গোলা, দোকান-পত্রও আছে । বেশ করে ঘেরার পরে জাপানীর হঠাৎ একযোগে ভীষণ পৈশাচিক চীৎকার করে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে নিদ্রিত নরনারী ঘুম ভেঙে বাইরে এসে অনেকে দাড়ালো—অনেকে ব্যাপারটা কি না বুঝতে পেরে বিস্ময় ও কৌতুহলের দৃষ্টিতে জানলা খুলে চেয়ে দেখতে লাগলো। তারপর যে দুপ্তের স্বচনা হোল তা যেমন নিষ্ঠুর, তেমনি অমানুষিক। বিমলের চোখের সামনে বর্বর জাপানী সৈন্যেরা নিরীহ গ্রামবাসীদের টেনে টেনে ঘর থেকে বার করতে লাগলো, এবং বিনা দোষে বেণ্ডনেটের কিংবা বন্দুকের কুঁদোর ঘায়ে তার মধ্যে সাত আটজনকে একদম মেরে ফেললে। ছুতো এই যে, ৩ারা নাকি বাধা দিয়েছিল । বাকীগুলোকে এক জায়গায় জড় করে দাড় করিযে রাখলে—চারিধারে বেওনেটু-চড়ানো রাইফেল হাতে জাপানী সৈন্যের দল । দু-তিনখান খড়ের ঘরে আগুন লাগিয়ে দিলে। দুটো ছোট ছোট বাছুরকে ভয় দেখিয়ে মজা করতে লাগলো, একটা পিচ, গাছের ডালগুলো অকারণে ভেঙে গাছটাকে ন্যাড়া করে দিলে। তবুও বিমল সবটা দেখতে পাচ্ছিল না—একে অন্ধকার, গ্রামটাও লম্বায় বড়, ওদিকে কি হচ্ছে না হচ্ছে সে জানে না—তার সামনে যেগুলো ঘটছে সেগুলো সে কেবল জানে। তবে নারী ও শিশুকণ্ঠের চীৎকার শুনে মনে হচ্ছিল, ওদিকের জাপানী সৈন্যেরা ঠিক বুদ্ধদেবের বাণী আবৃত্তি করছে না। মিনিট কুডি পচিশ এমনি চললে—বেশীক্ষণ ধরে নয়। তথন অন্ধকার বেশ ঘন হয়ে এসেছে, কেবল জলন্ত ঘরের চালের আলোয় সামনেট আলোকিত । হঠাৎ বিমলের যেন হুশ হোল—সে তার আশেপাশে চেয়ে দেখলে তার খুব কাছে কোনো জাপানী সৈন্য নেই—লুঠপাটের লোভে সবাই গ্রামের ঘর-দোরের মধ্যে ঢুকে পড়েছে বা রাস্তার ওপর দাড়িয়ে উত্তেজিত ভাবে জটলা করছে। বিমল একবার পিছনের দিকে চাইলে—সেদিকে একথান কামানের গাড়ী দাড়িয়ে । গাড়ীর কাছে সৈন্য নেই। গাড়ীখান থেকে পঞ্চাশ গজ আন্দাজ দূরে একটা প্রাচীন সহমরণের স্মৃতিস্তম্ভ। চীনদেশের অনেক পাড়াগায়ে সহমৃতা বিধবার এমন পুরোনো আমলের স্মৃতিস্তম্ভ সে আরও দু-একট। দেখেছে। ততদূর পর্য্যন্ত বেশ দেখা যাচ্ছে অগ্নিকাণ্ডের আলোয়, কিন্তু তার ওপারে অন্ধকার—কিছু দেখা যায় না। বিমল আস্তে আস্তে পিছনে হটতে হটতে দশ বারো পা গিয়ে হঠাৎ পেছনে ফিরে ছুট, দিয়ে সহমরণের স্মৃতিস্তম্ভটার আড়ালে একটা অন্ধকার স্থানে এসে দাড়ালো। ওর বুক টিপ, টিপ করছে। যদি জাপানীরা তাকে এখন ধরে, তবে এখুনি গুলি করে মারবে। কিন্তু ওদের হাতে বন্দী হয়ে এভাবে থাকার চেয়ে মৃত্যুপণ করেও মুক্তির চেষ্টা তাকে করতে হবে । স্মৃতিস্তম্ভটার গায়ে একটা ডোবা । অন্ধকারের মধ্যেও মনে হোল ডোবাটায় বেশ জল