পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

X? 8 বিভূতি-রচনাবলী হয়ে এলো। ট্রেনের সকলের মুখ শুকিয়েছিল আগেই—এখন যেন বুকের রক্ত পৰ্য্যন্ত জমে গেল। এই ফাকা মাঠে বোমা ফেললে ট্রেনের চিহ্ন খুজে মিলবে না । তার ওপরে ছাদ-খোলা ট্রাকৃ গাড়ী বোঝাই সৈন্য, কারও মৃত-দেহ এর পর সনাক্ত পর্য্যস্ত করা যাবে না। এ্যালিস্ ও মিনিকে বাচানো গেল না শেষ পর্য্যস্ত । এরোপ্লেনখানা নীচে নেমে ছো-মারা চিলের মত একটা বোমা ফেলেই তখনি ওপরে উঠে গেল। সঙ্গে সঙ্গে ভীষণ বিস্ফোরণের শব্দ ! সমস্ত ট্রেনখানা কেঁপে নড়ে উঠলে যেন, কিন্তু ট্রেনের বেগ কমলে না। বিমল চেয়ে দেখলে রেললাইন থেকে দশ গজ দূরে একটা জায়গায় বিশাল গর্ভের কৃষ্টি করে মাটি, ধুলো, ঘাস, বালি, অন্তত: পচিশ ত্রিশ হাত উদ্ধে উৎক্ষিপ্ত করে কালো ধোয়ার আবরণের মধ্যে বোমাটা সমাধি লাভ করেছে। বোমারু তাগ, ঠিক করতে পারে নি। আর মাইল পাচ ছয় পরে একটা রেলস্টেশন। গাড়ীখান। সেখানে গিয়ে দাড়াবার পূর্বেই দেখা গেল স্টেশন থেকে প্রচুর ধোয়া বেরুচ্ছে—লোকজন ছোটাছুটি করছে—একটা হট্টগোল, কলরব, ব্যস্ততার ভাব। ট্রেনখানা স্টেশনে গিয়ে দাড়াতেই বোঝা গেল জাপানী বিমান থেকে বোমা ফেলে স্টেশনটাকে একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছে। টিনের ছাদ দুমড়ে বেঁকে ছিটকে বহু দূরে গিয়ে পড়েছে, একপাশে আগুন লেগে গিয়েছে—গোটা প্ল্যাটফর্মে মানুষের ছিন্নভিন্ন মৃতদেহ, কারো হাত, কারো পা, কারো মুণ্ড । নিকটে একখানা গ্রাম। গ্রামের চিহ্ন রাখেনি বোমারুর দল। ইনসেনডিয়ারি বোমা ফেলে সারা গ্রাম জালিয়ে দিয়েছে। ট্রেন থেকে সবাই নেমে সাহায্য করতে ছুটলো। গ্রামের লোক বেশী মরে নি—তবুও বিমল দেখলে গ্রামের পথে চার-পাচটা বীভৎস মৃতদেহ পড়ে আছে। এরোপ্লেনগুলোর চিহ্ন নেই আকাশে, তাদের কাজ শেষ করে তারা চলে গিয়েছে। গ্রামের নরনারী ভয়ে বিহ্বল হয়ে মাঠের মধ্যে ছুটে পালিয়েছিল, যদিও বিপদের সম্ভাৰন ছিল সেখানেই সৰ্ব্বাপেক্ষ বেশী, একটি মেয়ে একটা ভাঙা ঘরের সামনে ভাঙাচোরা হাড়িকুড়ি বেতের পেটরা কুড়িয়ে এক জায়গায় জড়ো করছে আর কাদছে । একজন মেয়ে-সৈন্য তার কাছে গিয়ে চীনা ভাষায় কি জিজ্ঞেস করলে। বিমলের দল গ্রামের অন্য অন্ত লোকজনের সাহায্য করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো । Jo একটু পরেই সেখানে ভারী একটি অদ্ভুত দৃশু সবারই চোখে পড়লো। গ্রামের পাশে একটা ছোট্ট মাঠ—তারই এক গাছতলায় জনৈক বৃদ্ধ গ্রামের লোকজনকে চারিপাশে নিয়ে কি বলছেন বক্তৃতার ধরণে। বিমল চিনলে—প্রোফেসর লি ! এ্যালিস সকলের আগে এগিয়ে গিয়ে বল্লে—ড্যাডি ! চিনতে পারো ? সৌম্য মূৰ্ত্তি শ্বেতশুশ্রী বৃদ্ধ বক্তৃত থামিয়ে একগাল হেসে ওর দিকে অবাক হয়ে খানিকক্ষণ চেয়ে রইলেন, তারপর বল্পেন—তোমরা কোথা থেকে ? এ্যালিস্ হেসে বল্পে—এই ট্রেনে নামলাম। আর একটু হোলে আমাদের কাউকে দেখতে