পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মরণের ডস্ক বাজে ১৩১ আসছে—পাইনবনের মাঝখানে। সামনের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে কমাণ্ডাণ্ট, খবর পাঠিয়েছেন। ডেসপ্যাচ-রাইডার আরও এক করুণ সংবাদ দিলে—আজ সকালে জাপানীদের হ্যাণ্ড,গ্রিনেড, চার্জে নারীবাহিনীর সতেরোটি তরুণী একদম মারা পড়েছে। একেবারে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে তাদের দেহ-হাত, পা, মুণ্ড, আঙ ল—ছড়িয়ে ছত্রাকার হয়ে গিয়েছে। মিনি শিউরে উঠে বল্লে—ও হাউ সিম্পলি ড্রেড ফুল ! কেন জানি না এই দুঃসংবাদে বিমলের মন এ্যালিসের প্রতি মমতায় ভরে উঠলো। এলিসের মতই উদার, নিঃস্বার্থ সতেরোটি তরুণী—কত গৃহ অন্ধকার করে, কত বাপমায়ের হৃদয় শূন্য করে চলে গেল –মাহুষ মাহুষের ওপর কেন এমন নিষ্ঠুর হয় ? হঠাৎ পলাতকদের মধ্যে একটা ভয়াৰ্ত্ত শোরগোল উঠলো। সবাই ছুটছে, গাছের তলায় গুড়ি মেরে বসছে, ঘাসের মধ্যে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ছে—একটা হুড়োহুড়ি, এ ওকে ঠেলছে, দু একজন উৰ্দ্ধশ্বাসে খোলা মাঠের দিকে ছুটছে। ডেসপ্যাচ-রাইডার সৈনিক যুবকটি বস্ত-সমস্ত হয়ে বল্লে—নীচু হয়ে বসে পড়ুন—সবাই শুয়ে পড়ুন—জাপানী বম্বার ! আকাশে এরোপ্লেনের আওয়াজ বেশই স্পষ্ট হয়ে উঠলো বিমল চোখ তুলে দেখলে পাইনবনের মাথার ওপর আকাশে দুখান৷ কাওয়াসাকি বম্বার নিজের অজ্ঞাতসারে সে তখনি এ্যালিসের হাত ধরে তাকে একটা গাছের তলায় নিয়ে দাড় করালে । —প্রোফেসর লি—প্রোফেসর লি—এদিকে আসুন— ভীষণ একটা আওয়াজ বিদ্যুতের মত আলোর চমক ধোয়া, মাটি পায়ের তলার মাটি কেঁপে উঠলে৷ ভূমিকম্পের মত সবারই কানে তালা চোখ অন্ধকার-জাপানী বম্বার বোমা ফেলছে । সঙ্গে সঙ্গে চারিদিকে আৰ্ত্তনাদ কান্না-গোঙানি নারীক ঠর ভয়াৰ্ত্ত চীৎকার। আবার একটা বিমলের মনে হোল পৃথিবীর প্রলয় সমাগত পৃথিবী দুলছে, আকাশ দুলছে-কেউ বঁাচবে না ; মিনি, এ্যালিস্, সে, সুরেশ্বর, প্রোফেসর লি, সবাই এই প্রলয়ের অনলে ধবংস হবে । তার পর ক'টা বোমা পড়লে এরোপ্লেন থেকে—তা আর গুণে নেওয়া সম্ভব হোল না বিমলের পক্ষে। বিস্ফোরণের আওয়াজ ও মনুষ্য-কণ্ঠের আর্তনাদের একটা একটানা শব্বপ্রবাহ তার মস্তিষ্কের মধ্যে বয়ে চলেছে—একটা থেকে আর একটাকে পৃথক করে নেওয়া শক্ত । তারপর হঠাৎ যখন সব থেমে গেল, এরোপ্লেন চলে গিয়েছে—যখন বিমল আবার সহজ বুদ্ধি ফিরে পেল—তখন দেখলে এ্যালিসের একখান হাত শক্ত করে তার নিজের মুঠোর মধ্যে ধরা।--মিনি, সুরেশ্বর, প্রোফেসর লি সকলে মাটিতে শুয়ে—হয়তে সবাই মারা গিয়েছে— সে-ই একমাত্র রয়েছে বেঁচে । প্রথমে মাটি থেকে ঝেড়ে উঠলো এ্যালিস্ । তারপর প্রোফেসর লি, তারপর সুরেশ্বর – মিনি মূৰ্ছা গিয়েছে—অনেক কষ্টে তার চৈতন্য সম্পাদনা করা হোল। হঠাৎ এ্যালিস চমকে