পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/১৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মিস্‌মিদের কবচ
১৮১

 —তা হতে পারে বাবু, কিন্তু তা সম্ভব নয়। একদিনে পাঁচজন খাতকে টাকা শোধ দেবে না। আর-একটা কথা বাবু। চাষী-খাতক সব—ভাদ্রমাসে ধান হবার সময় নয়—এখন যে চাষী-প্রজারা টাকা শোধ দিয়ে যাবে, তা মনে হয় না। ওরা শোধ দেয় পৌষ মাসে—আবার ধার নেয় ধান-পাট বুনবার সময়ে চৈত্র-বৈশাখ মাসে। এ-সময় লেন-দেন বন্ধ থাকে।


পঞ্চম পরিচ্ছেদ


কোনো কিছু সন্ধান পাওয়া গেল না ননীর কাছে। তবুও আমার সন্দেহ সম্পূর্ণরূপে গেল না। ননী হয় সম্পূর্ণ নির্দ্দোষ, নয়তো সে অত্যন্ত ধূর্ত্ত। মিঃ সোম একটা কথা সব-সময়ে বলেন, “বাইরের চেহারা বা কথাবার্ত্তা দ্বারা কখনো মানুষের আসল রূপ জানবার চেষ্টা কোরো না—করলেই ঠকতে হবে। ভীষণ চেহারার লোকের মধ্যে অনেক সময় সাধুপুরুষ বাস করে—আবার অত্যন্ত সুশ্রী ভদ্রবেশী লোকের মধ্যে সমাজের কণ্টকস্বরূপ দানব-প্রকৃতির বদমাইশ বাস করে। এ আমি যে কতবার দেখেচি।”

 ননীর বাড়ী থেকে ফিরে এসে গাঙ্গুলিমশায়ের বাড়ীর পেছনটা একবার ভালো ক’রে দেখবার জন্যে গেলাম।

 গাঙ্গুলিমশায়ের বাড়ীতে একখানা মাত্র খড়ের ঘর। তার সঙ্গে লাগাও ছোট্ট রান্নাঘর। রান্নাঘরের দরজা দিয়ে ঘরের মধ্যে যাওয়া যায়। এসব আমি গাঙ্গুলিমশায়ের ছেলের সঙ্গে ঘুরে-ঘুরে দেখলাম।

 তাকে বল্লাম—আপনার পিতার হত্যাকারীকে যদি খুঁজে বার করতে পারি, আপনি খুব খুশী হবেন?

 সে প্রায় কেঁদে ফেলে বল্লে—খুশী কি, আপনাকে পাঁচশো টাকা দেবো।

 —টাকা দিতে হবে না। আমায় সাহায্য করুন। আর-কাউকে বিশ্বাস করতে পারিনে।

 —নিশ্চয় করবো। বলুন কি করতে হবে?

 —আমার সঙ্গে সঙ্গে আসুন আপাততঃ। তারপর বলবো যখন যা করতে হবে। আচ্ছা, চলুন তো বাড়ীর পিছন দিকটা একবার দেখি?

 —বড্ড জঙ্গল, যাবেন ওদিকে?

 —জঙ্গল দেখলে তো আমাদের চলবে না—চলুন দেখি।

 সত্যই ঘন আগাছার জঙ্গল আর বড়-বড় বনগাছের ভিড় বাড়ীর পেছনেই। পাড়াগাঁয়ে যেমন হয়ে থাকে—বিশেষ ক’রে এই শ্যামপুরে জঙ্গল একটু বেশি। বড়-বড় ভিটে লোকশূন্য ও জঙ্গলাবৃত হয়ে পড়ে আছে বহুকাল থেকে। ম্যালেরিয়ার উৎপাতে দেশ উৎসন্ন গিয়েছিল বিশ-ত্রিশ বছর আগে। এখন পাড়ায়-পাড়ায় নলকূপ হয়েচে জেলাবোর্ডের অনুগ্রহে, ম্যালেরিয়াও অনেক কমেচে—কিন্তু লোক আর ফিরে আসেনি।

 জঙ্গলের মধ্যে বর্ষার দিনে মশার কামড় খেয়ে হাত-পা ফুলে উঠলো। আমি প্রত্যেক