পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯৬
বিভূতি-রচনাবলী

—পুলিসের জিম্মায়।

—আপনি ভালো ক’রে দেখেচেন খাতাখানা?

—দেখেচি বলেই তো ননীকে জড়াতে পারিনে ভালো ক’রে।

—কেন?

—শুধু ননীর হাতের লেখা নয়, আরও অনেকের হাতের লেখা তাতে আছে।

—কার কার?

জানকীবাবু ব্যগ্রভাবে এ-প্রশ্নটা ক’রে আমার মুখের দিকে যেন উৎকণ্ঠিত-আগ্রহে উত্তরের প্রতীক্ষায় চেয়ে রইলেন। আমি মৃত-মুসলমান ভদ্রলোকটির ও স্কুলের ছাত্রটির কথা তাঁকে বললাম। জানকীবাবু বললেন—ও, এই! সে তো আমি জানি—শ্রীগোপালের মুখে শুনেচি।

—যা শুনেচেন, তার বেশি আমারও কিছু বলবার নেই।

পরদিন সকালে ননী ঘোষ এসে আমার কাছে হাজির হোলো। বল্লে—বাবু, আপনার সঙ্গে একটা কথা আছে।

—কি?

—জানকীবাবু এ গাঁয়ের জামাই ব’লে খাতির করি। কিন্তু উনি কাল রাতে আমায় যেরকম গালমন্দ দিয়ে এসেচেন, তাতে আমি বড় দুঃখিত। বাবু, যদি দোষ ক’রে থাকি, পুলিসে দিন—গালমন্দ কেন?

—তুমি বড় চালাক লোক ননী। আমি সব বুঝি। পুলিসে দেবার হোলে, তোমাকে একদিনও হাজতের বাইরে রাখবো ভেবেচো।

—বাবুও কি আমাকে এখনও সন্দেহ করেন?

লোকটা সাংঘাতিক ধূর্ত্ত। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এ-খুন যে-ই করুক, ননী তার মধ্যে নিশ্চয়ই জড়িত। অথচ ও ভেবেচে যে, আমার চোখে ধূলো দেবে!

বল্লাম—সে-কথা এখন নয়। এক মাসের মধ্যেই জানতে পারবে।

—বাবু, আপনি আমাকে যতই সন্দেহ করুন, ধর্ম্ম যতদিন মাথার উপর আছে—

ধূর্ত্ত লোকেরাই ধর্ম্মের দোহাই পাড়ে বেশি! লোকটার উপর সন্দেহ দ্বিগুণ বেড়ে গেল।


সারাদিন অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলাম।

সন্ধ্যার পরে আহারাদি সেরে অনেকক্ষণ বই পড়লাম। তারপর আলো নিবিয়ে দিয়ে নিদ্রা দেবার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কেন জানি না—অনেক রাত পর্য্যন্ত ঘুম হোলো না এবং বোধহয় সেইজন্যই সেই রাত্রে আমার প্রাণ বেঁচে গেল।

ব্যাপারটা কি হোলো খুলে বলি।