পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ



কাণ্ডটা এমন কিছুই নয়, খুবই সাধারণ।

জানকীবাবু পথের পাশে ঝোপের জঙ্গলের দিকে চেয়ে বল্লেন—দাঁড়ান, একটা দাঁতন ভেঙে নি। সকালবেলাটা...

তারপর তিনি আমার সামনে পথের ধারে একটা সেওড়াডাল ঘুরিয়ে ভেঙে নিলেন দাঁতনকাঠির জন্যে।

আমার ভাবান্তর অতি অল্পক্ষণের জন্যে।

পরক্ষণেই আমি সামলে নিয়ে তাঁর সঙ্গে সহজভাবে কথাবার্ত্তা বলতে শুরু করলাম।

ঘণ্টাখানেক পরে ঘুরে এসে আমি ভাঙা-সেওড়াডালটা ভালো ক’রে লক্ষ্য ক’রে দেখি, সঙ্গে সেদিনকার সেই দাতনকাঠির শুক্‌নো গোড়াটা এনেছিলাম,—যে বিশেষ ভঙ্গিতে আগের গাছটা ভাঙা হয়েচে, এটাও অবিকল তেমনি ভঙ্গিতে ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে ভাঙা!

কোনো তফাৎ নেই।

আমার মাথার মধ্যে ঝিম্‌ঝিম্ করছিল। আসাম, দাঁতনকাঠি—দুটো অতি সাধারণ, অথচ অত্যন্ত অদ্ভুত সূত্র।

জানকীবাবুর এখানে গত এক বছর ধ’রে ঘন ঘন আসা-যাওয়া, পত্নীবিয়োগ সত্ত্বেও শ্বশুরবাড়ী আসার তাগিদ, গাজুলিমশায়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব!

মিঃ সোম একবার আমায় বলেছিলেন, অপরাধী ব’লে যাকে সন্দেহ করবে, তখন তার পদমর্য্যাদা বা বাইরের ভদ্রতা—এমন কি, সম্বন্ধ, সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা ইত্যাদিকে আদৌ আমল দেবে না।

জানকীবাবুর সম্বন্ধে আমার গুরুতর সন্দেহ জাগলো মনে।

একটা সূত্র এবার অনুসন্ধান করা দরকার। অত্যন্ত দরকারী একটা সূত্র।

সকালে উঠে গিয়ে দারোগার সঙ্গে দেখা করলাম থানায়।

দারোগাবাবু আমায় দেখে বল্পেন—কি? কোনো সন্ধান করা গেল?

—ক’রে ফেলেচি প্রায়। এখন—যে খাতার পাতাখানা আপনার কাছে আছে, সেইখানা একবার দরকার।

—ব্যাপার কি, শুনি?

—এখন কিছু বলচিনে। হাতের লেখা মেলানোর ব্যাপার আছে একটা।

—কি রকম!

—গাঙ্গুলিমশায়ের খাতা লিখতো যে-ক’জন—তাদের সবার হাতের লেখা জানি, কেবল একটা হাতের লেখার ছিল অভাব—তাই না?

—সে তো আমিই আপনাকে বলি।