—আপনি কেন আবার এ-গ্রামে এসেছিলেন, খুনের পরে?
—আপনি নিশ্চয়ই তা বুঝেচেন।
—আন্দাজ করেছি। কবচখানা হারিয়ে গিয়েছিল খুনের রাত্রেই—সেখানা খুঁজতে এসেছিলেন।
—ঠিক তাই।
—সেদিন গাঙ্গুলিমশায়ের বাড়ীর পেছনের জঙ্গলে অন্ধকারে ওটা খুঁজছিলেন কেন, দিনমানে না খুঁজে?
—দিনেই খুঁজতে শুরু করেছিলাম, রাত হয়ে পড়লো।
—ওখানেই যে হারিয়েছিলেন, তা জানলেন কি ক’রে?
—ওটা সম্পূর্ণ আন্দাজি-ব্যাপার! কোনো জায়গায় যখন খুঁজে পেলাম না তখন মনে পড়লো, ওই জঙ্গলে দাঁতন ভেঙেছিলাম, তখন পকেট থেকে পড়ে যেতে পারে! তাই—
আমি ওঁর মুখে একটা ভয়ের চিহ্ন পরিস্ফুট হতে দেখলাম। বল্লাম—সব কথা খুলে বলুন। আমি এখনও আপনার সব কথা শুনিনি। তবে আপনার মুখ দেখে তা বুঝতে পারচি!
জানকীবাবু ফিস্ফিস ক’রে কথা বলতে লাগলেন, যেন তাঁর গোপনীয় কথা শুনবার জন্যে জেলে সেই ক্ষুদ্র কামরার মধ্যে কেউ লুকিয়ে ওৎ পেতে বসে রয়েচে। তাঁর এ ভাব-পরিবর্ত্তনে আমি একটু আশ্চর্য্য হয়ে গেলাম। ভয়ে দুঃখে লোকটার মাথা খারাপ হয়ে গেল না কি?
আমায় বল্লেন—ওখানা এখন কোথায়?
—একজিবিট্ হিসেবে কোর্টেই জমা আছে।
—তার পর কে নিয়ে নেবে?
—আপনার সম্পত্তি, আপনার ওয়ারিশান কোর্টে দরখাস্ত করলে—
জানকীবাবু ভয়ে যেন কোনো অদৃশ্য শত্রুকে দু'হাত দিয়ে ঠেলে দেবার ভঙ্গিতে হাত নাড়তে-নাড়তে বল্লেন—না না, আমি ও চাইনে, আমার ওয়ারিশান কেউ নেই, ও আমি চাইনে—ওই সর্ব্বনেশে কবচই আমাকে আজ এ-অবস্থায় এনেচে। আপনি জানেন না ও কি!
এই পর্য্যন্ত বলেই তিনি চুপ ক’রে গেলেন। যেন অনেকখানি বেশি ব’লে ফেলেচেন—যা বলবার ইচ্ছে ছিল তার চেয়েও বেশি। আর তিনি কিছু বলতে চান না বা ইচ্ছে করেন না।
আমি বল্লাম—আপনি যদি না নিতে চান, আমি কাছে রাখতে পারি।
আমার দিকে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে চেয়ে জানকীবাবু বল্লেন—আপনি সাহস করেন?
–এর মধ্যে সাহস করবার কি আছে? আমায় দেবেন।
—আপনি আমায় পুলিসে ধরিয়ে দিয়েচেন, আপনি আমার শত্রু—তবুও এখন ভেবে দেখচি, আমার পাপের প্রায়শ্চিত্তের ব্যবস্থা ক’রে দিয়েচেন আপনি! আপনার ওপর