পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२२७ বিভূতি-রচনাবলী রবিবার ও সোমবার থাকিয় মঙ্গলবার দুপুরের দিকে বাসায় আসিয়া পৌছিলাম। বলা আবশ্বক বাসায় আমি একাই থাকি। স্কুলের চাকর রাখহরি আমার রাখে, এ কয়দিন স্কুলের ছুটি ছিল, রাখহুরিকে আমি সঙ্গে করিয়া লইয়া গিয়াছিলাম । বাহিরের দরজার তালা খুলিয়াই রাখহরি বলিয়া উঠিল, “এ, বাৰু, এ কিসের রক্ত! দেখুন--” প্রায় চমকিয়া উঠিলাম। তাই বটে ! বাহিরের দরজায় চৌকাঠের ঠিক ভিতর দিক হইতেই রক্তের ধারা উঠান বাহিয়া যেন চলিয়াছে। একটানা ধারা নয়, ফোটা ফোটা রক্তের একটা অবিচ্ছিন্ন সারি। একেবারে টাটক রক্ত—এইমাত্র সন্ত যেন কাহারও মূও কাটিয়া লইয়া যাওয়া হইয়াছে। আমি তো অবাক! কিসের রক্তের ধারা এ ! কোথা হইতেই বা আসিল, আজ ছুদিন তো বাসা বন্ধ ছিল—বাড়ীর ভিতরের উঠানে রক্তের দাগ আসে কোথা হইতে—তাহার উপর লষ্ঠ তাজা রক্ত । অবগু কুকুর, বিড়াল ও ইদুরের কথা মনে পড়িল। এ ক্ষেত্রে পড়াই স্বাভাবিক। চাকরকে বলিলাম, “দেখতো রে, রক্তটা কোন দিকে ঘাচ্চে—এ সেই বড় হলো বেড়ালটার कांछ•••* - রক্তের ধারাটা গিয়াছে দেখা গেল সিড়ির নিচের চোরকুঠুরির দিকে। ছোট ঘর, ভীষণ অন্ধকার এবং স্বত রাজ্যের ভাঙাচোরা পুরনো মালে ভৰ্ত্তি বলিয়া আমি কোনোদিন চোরকুঠুরি খুলি নাই। চোরকুঠুরির দরজা পার হইয়া বন্ধ ঘরের মধ্যে রক্তের ধারাটার গতি দেখিয়া ব্যাপার কিছু বুঝিতে পারলাম না। কতকাল ধরিয়া ঘরটা বাহির হইতে তালা বন্ধ, যদি বিড়ালের ব্যাপারই হয়, বিড়াল ঢুকিতেও তো ছিদ্রপথ দরকার হয়। চোঞ্চকুঠুরির তালা লোহার শিকের চাড় দিয়া খোলা হইল। আলো জালিয়া দেখা গেল ঘরটায় পুরনো, ভাঙা, তোবড়ানো টিনের বাক্স, পুরনো ছেড়া গদি, খাটের পায়া, মরিচাধৱ সড়কি, ভাঙা টিন, শাবল প্রভৃতি ঠাসা বোঝাই। ঘরের মেঝেতে সোজা রক্তের দাগ এক কোণের দিকে গিয়াছে—রাখহরি খুজিতে খুজিতে হঠাৎ চিৎকার করিয়া বলিয়া উঠিল, “এ কি বাৰু! এতে কি করে এমনধারা রক্ত লাগলো---” তারপর সে কি একটা জিনিস হাতে তুলিয়া ধরিয়া বলিল, “দেখুন কাওটা বাবু” জিনিসটাকে হাতে লইয়া সে বাহিরে আসিতে তাহার হাতের দিকে চাহিয়া আমি চমকিয়! উঠিলাম। একখানা মরিচাধরা হাতলবিহীন ভাঙা খাড়া বা রাম-দা—আগার দিকটা চওড়া ও বাকানো—বড় চওড়া ফলাটা তাজ রক্তে টক্‌টকে রাঙা! একটু আধটু রক্ত নয়, ফলাতে আগাগোড়া রক্ত মাখানে, মনে হয় যেন খাড়াখানা হইতে এখনি টপটপ করিয়া রক্ত ঝরিয়া পড়বে | সেই ক্ষুর্ভে এক সঙ্গে আমার অনেক কথা মনে হইল। দুই বৎসর পূর্বে চন্দ্ৰ পাণ্ডার মুখে শোনা সেই গল্প। রঙ্কিণীদেবীর লেবাইত বংশের ভদ্রাসন বাড়ী এটা। পুরানো