পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩৮ বিভূতি-রচনাবলী পাড় ভেঙে গিয়েচে। অনেকটা উচু পাড়, নিচে খরস্রোতা বর্ধার নদী। জায়গাটা দিয়ে যেতে যেতে একবার কি-রকম ভেঙেচে দেখবার ইচ্ছে গেল। পাড়ের ধারে দাড়িয়ে নিচে জলের আবর্ত দেখচি, পাড়টা সেখানে অনেকখানি উচু, জল অনেক নিচে—হঠাৎ আমার মনে একটা অদ্ভুত ইচ্ছা জেগে উঠলো—আমি লাফ দিয়ে পাড় থেকে জলে পড়বে।--দাড়িয়ে থাকতে থাকতে ইচ্ছাটা যেন ক্রমে বেড়ে উঠচে-লাফাই...দিই লাফ- অথচ বর্ষার খরস্রোতা নদী, কুটো ফেললে দু’খানা হয়ে ষায় ! আমি সাতার জানি না,—গভীর জল পাড়ের নিচেই । ইচ্ছাটা কিছুতেই যেন সামলাতে পারচিনে! এমন কি আমার মনে হ’ল আর কিছুক্ষণ থাকলে আমাকে লাফ দিতেই হবে, নইলে আমার জীবনের স্থখ চলে যাবে! ••• তাড়াতাড়ি নদীর পাড় থেকে এক রকম জোর করেই চলে এলুম। কারণ যেন মনে হচ্ছিল এর পর আমার আর যাওয়ার ক্ষমতা থাকবে না, পা দুটো যেন ক্রমশ সাঁসের মত ভারি হয়ে উঠচে–এর পর ওই বিপজ্জনক নদীর পাড় থেকে পা ছুটোকে নাড়াবার ক্ষমতা চলে যাবে আমার !-- নদীর ধার থেকে বৃন্দাবনদের বাড়ী আসবার পথে ও সব ইচ্ছে আর কিছু নেই। আমি নিজের মনোভাবে নিজেই আশ্চর্ঘ্য হয়ে গেলুম—কি অদ্ভুত এ রকম হওয়ার মানে কি ? ট্রেনে বলে অতিমাত্রায় ধুমপান করেছিলাম মনে পড়লো। ওই ভাত্র মাসের গরমে অতধৰ্মপান করা ঠিক হয় নি, তার ওপর বাড়ী এসে দু'তিন পেয়ালা চ খেয়েচি। এ সবেই ওরকমটা হয়ে থাকবে।—নিশ্চয়ই তাই। বৃন্দাবনের বাড়ী গেলুম। বৃন্দাবনকে অনেক দিন পরে দেখে সত্যিই আনন্দ হ’ল। দুজনে অনেক রাত পৰ্য্যস্ত বসে অনেক গল্প করলুম। অনেক-বছর-ধরে-জমানো অনেক স্থখ-দুঃখের কাহিনী। বড় গরম আজ, কোথাও এতটুকু বাতাস নেই। ভাদ্রমাসের গুমোট গরম। বৃন্দাবন বললে, “চল ভাই, ছাদে গিয়ে বসে গল্প করি, তবুও একটু হাওয়া পাওয়া যাবে।--তুই আমাদের এখানে খেয়ে যাবি—ম বলে দিয়েচেন। তোদের বাড়ীতেও খবর দেওয়া হয়েচে ।” o ছজনে ছাদে উঠলুম। বাড়ীটা দোতলা। দেী-তলার ছাদের ওপর একখানা মাত্র ঘর আছে। আমি জানতুম, বৃন্দাবনের কাক ওই ঘরটায় থাকেন। দোতলার ছাদে উঠে দেখলুম —বাড়ীর পেছন দিক্‌টায় বাশের ভার-বাধা । বললুম, “বাড়ীতে রাজমিস্ত্রি খাটচে বুঝি, বৃন্দাবন ?”

  • ই্যা ভাই, কাকার ঘরটা মেরামত হবে ; উত্তর দিকে দেওয়ালটার গা থেকে নোনা ধরা ইটগুলো বার করা হচ্ছে।”

বৃন্দাবন দোতলায় ঘরটার মধ্যে ঢুকলো—আমার কিন্তু মনে কেমন একটা অস্থির ভাব ! খানিকক্ষণ ঘরের মধ্যে গল্প করে আমি একটু জল খেতে চাইলুম। বৃন্দাবন জল আনতে নিচে নেমে গেল, আমি ছাদে পায়চারি করতে লাগলুম। ছাদে কেউ নেই। অন্ধকার ছাট। •••ৰে দিকটায় রাজমিস্ত্রিরা তারা বেঁধে কাজ কল্পচে, পাল্পচারি করতে করতে লেখানটাতে গিয়ে