পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩৪ বিভূতি-রচনাবলী পেলুম লোকটি তোমার পেছনে পেছনে যাচ্ছে•••তোমার মাথার চেয়েও যেন এক হাত লম্বা ...তোমার একেবারে ঠিক পেছনে•••তবে খুব ভালো তো দেখতে পেলুম না-অতদূর থেকে এর নলে-জত্বকারের মধ্যে স্পষ্ট কিছু দেখা গেল না তো! এমন কি একবার এ পর্যন্ত মনে হ’ল তোমায় ডেকে জিজ্ঞেস করি তোমার বন্ধুটি কে ?•••একেবারে এত ভুল হবে চোখের ?” জ্যাঠামশায়কে পুনরায় বুঝিয়ে বললুম, আমার সঙ্গে কাল কেউ ছিল না । আমি একাই ছিলুম, স্বতরাং তার দৃষ্টিশক্তির গোলমাল ছাড়া এ-ব্যাপারের অন্ত কোনো সিদ্ধাস্ত করা চলে না । সারাদিন বৃন্দাবনের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে কাটানো গেল। গতকাল রাত্রের ভয়ের ব্যাপার দিনের আলোয় এত হাস্যকর বলে আমার নিজের কাছেই মনে হ’ল যে, বৃন্দাবনকে সে কথাট। বলিও নি । রাত্রের ট্রেনে কলকাতায় ফিরবো। বৃন্দাবনদের বাড়ী থেকে চা খেয়ে বাড়ী এসে স্কটকেলটা নিয়ে স্টেশনের দিকে রওনা হয়েচি, তখনই সন্ধ্যার অন্ধকার বেশ নেমেচে । বাউরিপাড়ার বড় বাগানটার মধ্যে দিয়ে আসচি-বাগানটা পার হতে প্রায় পাঁচ-ছ মিনিট লাগে—মস্ত বড় বাগান ৷ বাগানের ঠিক মাঝামাঝি এসে হঠাৎ পেছন ফিরে চাইলুম কি ভেবে। সঙ্গে সঙ্গে আমার সারা দেহে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল। আচমকা ভয়ে আমার সব্ব শরীর কাঠ হয়ে গেল । কে ওটা ওখানে দাড়িয়ে ? রাস্ত থেকে একটু পাশে আগাছার জঙ্গলের মধ্যে আধ-অন্ধকার এক অদ্ভুত মৃত্তি। খুব লম্ব, তার মাথায় ঘোড়ার বালামচির সেই এক লম্বা ধরণের টুপি, পাতলা লোহার চেন দিয়ে থুতনির সঙ্গে বাধা—ছবিতে গোৱা সৈনিকদের মাথায় ষে ধরনের টুপি দেখা যায়!--মূৰ্ত্তিটা ষেন নিশ্চল নিম্পদ অবস্থায় আমার দিকে চেয়ে দাড়িয়ে! আমার কাছ থেকে মাত্র দশ গজ কি তারও কম দূরে। মরীয়ার মতো আর একটু এগিয়ে গেলুম। এই ভয়ানক কৌতুহল আমাকে চরিতার্থ করতেই হবে যেন ! মুক্তি নড়ে না চড়ে না—যেন নিশ্চল পাথরের মূৰ্ত্তি। কিন্তু বেশ স্পষ্ট দেখচি সাত আট গজ মাত্র দূরে তখন যুক্তিটা। আর ঘোড়ার বালামচির লম্বা টুপি ও ইস্পাতের চেনের স্ট্রাপ, স্পষ্ট দেখতে পেলুম। - আমার পাঠকৃঠক করে কাপতে লাগলো, সারা দেহ কেমন অবশ হয়ে আসচে, মাথাটা হঠাৎ বড় হালকা হয়ে গিয়েচে! বোধ হয় আর আধ মিনিট এভাবে থাকলে মূচ্ছিত হয়ে পড়ে বেতুম—কারণ সেই ভীষণ মূৰ্ত্তিটার মুখোমুখি আমি দাড়িয়ে—আমার প৷ দুটো বেজায় ভারী হয়েচে–লাড়বার উপায় নেই মূত্তির সামনে থেকে ••• কিন্তু ঠিক সেই সময়ে বাউরিবাগানের পথে লন্ঠন নিয়ে কারা ঢুকলো। দু-তিন জন