পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२8३ বিভূতি-রচনাবলী বিদেশী দেখলে মেরেধরে যথাসৰ্ব্বস্ব কেড়ে নেয়। প্রায়ই বনের ধারে বড় বড় মাঠের মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে থাকে। সাবধান, একটা দীঘি পড়বে মাঠের মধ্যে ক্রোশ তিনেক দূরে, জায়গাটা ভালো নয়---” t বড় বড় মাঠের ওপর দিয়ে রাস্তা। সন্ধ্যা প্রায় হয়-হয়, এমন সময় দূরে একটা তালগাছ ঘেরা দীঘি দেখা গেল বটে। আমার বুক টিপচিপ করে উঠলো। দীঘির ও-পাশে সঞ্জয়পুর বলে একটা গ্রাম, সেখানেই রাত্রের জন্তে আশ্রয় নেওয়ার কথা বাজারে বলে দিয়েছিলো । কিন্তু সন্ধ্যা তো হয়ে গেল তালদীঘির এদিকেই—অন্ধকার হবার দেরি নেই, কোথায় বা সঞ্জয়পুর, কোথায় বা কি ? মনে ভারি ভয় হ’ল। কি করি এখন ? সঙ্গে মাদুলি ও ওষুধ বিক্রির দরুণ অনেক টাকা। পরক্ষণেই ভাবলাম, কিছু না পারি, দৌড়তে তে পারব ? না-হয় ব্যাগটাই যাবে,—প্রাণ তো বঁচিবে । তয়ে ভয়ে দীঘির কাছাকাছি তো এলুম। বড় সেকেলে দীঘি, খুব উচু পাড়, পাড়ের দুধারে বড় বড় তালগাছের সারি। তার ধার দিয়েই রাস্তা। দীঘির পাড়ে কিন্তু লোকজনের সম্পর্ক নেই। যে ভয় করেছিলুম, দেখলুম সবই ভূয়ো। মানুষ মিথ্যে যে কেন এ-রকম ভয় দেখায় ! প্রকাও দীঘিটার পাড় ঘুরে যেমন তালবনের সারি ও দীঘির উচু পাড়কে পেছনে ফেলেচি, সামনেই দেখি ফাক মাঠের মধ্যে দূরে একটা গ্রাম লি-লি করছে—নিশ্চয় ওটা সেই সঞ্জয়পুর। • বাচা গেল বাবা ? কি ভয়টাই দেখিয়েছিল লোকে । দিব্যি ফাকা মাঠ, কাছেই লোকের বসতি, গায়ের গরু বাছুর চরছে মাঠে—কেন এ সব জায়গায় বিপদ থাকবে ? আমি এই রকম ভাবচি, এমন সময় তালপুকুরের ওদিকের পাড়ের আড়ালে যে পথটা, সেই পথ বেয়ে একজন বৃদ্ধকে আমার দিকে আসতে দেখলুম। বৃদ্ধ বেশ বলিষ্ঠ গড়নের, এই বয়সেও মাংসপেশী বেশ সবল, গলায় রুদ্রাক্ষের মালা, হাতে ছোট একটা লাঠি । বৃদ্ধ আমায় বললে, “ঠাকুরমশায় কোথায় যাবেন ?” “ষাব মাখমপুর...” *মাখমপুর । সে যে এখনও তিন ক্রোশ পথ...কাদের বাড়ী যাবেন ?” “শচীশ কবিরাজের বাড়ী।” “ঠাকুরমশায় কি কবিরাজমশায়ের গোমস্ত ?” “গোমস্ত নই, তবে যাচ্ছি জমিজমার কাজে বটে।” “এ অঞ্চলে আর কাউকে চেনেন "মশাইয়ের নিজের বাড়ী কোথায় ?” “আমি এদিকে কখনও আসিনি, কাউকে চিনিও নে। মাখমপুরেও নতুন যাচ্ছি...” “সেখানেও কেউ তাহলে আপনাকে চেনে না ?” “নায়, কে চিনবে ?” আমার এই কথায়, আমার যেন মনে হ’ল বুড়ে একটু কি ভাবলে, তারপর আমায় বললে,