পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তালনবমী २8७ “কিছু যদি মনে না করেন, একটা কথা বলি...রাত্রে আজ দয়া করে আমার বাড়ীতে পায়ের ধুলো দিন। আমরা জাতে বারুই, জল-আচরণীয়, আপনার অস্থবিধে হবে না। চণ্ডীমণ্ডপের পাশে বাইরের ঘর आरई, সেখানে থাকবেন, রান্নাবাড়া করে থাবেন...আস্বন দয়া করে---” আমি বুদ্ধের কথায় ভারী সন্তুষ্ট হলুম। সত্যিই তো, সেকালের লোকেরা অন্য ধরণের শিক্ষায় মাহুষ। অতিথি-অভ্যগতদের সেবা করেই এদের তৃপ্তি। বৃদ্ধ এই প্রস্তাব না করলে রাঢ় অঞ্চলের অজানা মেঠো পথ বেয়ে এই স্বমুখ-আঁধার রাতে আমায় যেতেই তো হ’ত মাখমপুরে, তিন ক্রোশ হেঁটে । গ্রামের পূর্বপ্রান্তে বড় মাঠের ধারে বৃদ্ধের বাড়ী। বুদ্ধের নাম নফরচন্দ্র দাস। আমি চণ্ডীমণ্ডপে গিয়ে উঠতেই একটা কুকুর ঘেউঘেউ করে উঠলো। কুকুরের এই ডাকটা আমার ভালো লাগলো না ; এর আমি কোন কারণ দিতে পারবো না,—কিন্তু এই কুকুরের চিৎকারে যেন একটা ছন্নছাড়া অমঙ্গলজনক অর্থ আছে—মঙ্গলসন্ধ্যায় কোন গৃহস্থবাড়ীতে আসি নি, যেন শ্মশানভূমিতে এসেচি. বৃদ্ধের বাড়ী দেখে মনে হ’ল বেশ অবস্থাপন্ন গৃহস্থ। বাড়ীর উঠোনে সারি সারি তিনটে বড় বড় ধানের গোল—গোলার সঙ্গে প্রকাগু গোয়ালঘর, বলদ ও গাইয়ে প্রায় কুড়ি বাইশটা ৷ অস্তঃপুরের দিকে চারখানা বড় বড় আটচালার ঘর। বাইরের এই চণ্ডীমণ্ডপ ও তার পাশে আর একখানা কুঠরি ! আমার কথাটা ভালো করে বুঝতে গেলে এই কুঠরিটার কথা আর একটু ভালো করে শুনতে হবে। কুঠরিটিকে চণ্ডীমণ্ডপ-সংলগ্ন একটা কামরাও বলা যায়, কারণ একটা সরু রোয়াকের দ্বারা চওঁীমগুপের পেছন দিকের সঙ্গে সংলগ্ন ; অথচ দোর বন্ধ করে দিলে বাইরের বাড়ীর সঙ্গে এর সম্পর্ক চলে গিয়ে এট ভেতরবাড়ীর একখানা ঘরের সামিল হয়ে দাড়ায়। আমায় বাসা দেওয়া হ’ল এই কুঠরিতে। কুঠরির একপাশে ছোট একটা চালা। সেখানে আমার রান্নার আয়োজন করে দিয়েচে । হাত-মুখ ধুয়ে স্বস্থ হয়ে আমি বিশ্রাম করচি। গৃহস্বামী এসে বললে, “ঠাকুরমশায় রান্না চাপান, আর রাত করেন কেন ?” আমি রান্নাচালায় বসে রান্না চড়িয়ে দিতে যাচ্ছি, এমন সময় দেখি একটি বাড়ীর বেী ভেতর থেকে একগাছা বাট হাতে এসে আমার রান্নাচালার সামনে দিয়ে ঢুকলো ও বাট দিতে লাগলো। কুঠরির দরজা খোল, আমি যেখানে বসে সেখান থেকে কুঠরিটার ভেতর দেখা যায়। আমি দু-একবার বিস্ময়ের সঙ্গে দেখলুম বৌটি বাট দিতে দিতে আমার দিকে চেয়ে চেয়ে দেখচে । দু'তিন বার বেশ ভালো করে লক্ষ্য করে মনে হ’ল বৌটি ইচ্ছে করেই আমার দিকে অমন করে চাইচে । আমি দম্বরমত অবাক হয়ে গেলুম। ব্যাপার কি ? সম্পূর্ণ অপরিচিত মেয়ে, পল্লীর গৃহস্থবধু—এমন ব্যবহার তো ভালো নয় ? কি হাঙ্গামায় আবার পড়ে যাবো রে বাবা। কর্তাকে কাছে বসিয়ে রাধতে রাধতে গল্প করবো নাকি ? .