পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তালনবমী ૨& S অতিকষ্টে বামাচরণ মই বেয়ে উপরে উঠলো। নিতাই খুব অবাক হয়ে গিয়েচে—পাড়ের ওপর মই দিয়ে উঠে কি হবে, কি আছে ওখানে ? সে একটু হতাশও যে না হয়েচে—এমন নয়। বড় মাছ নয়, তাহলে হয়তো বাবা কোনো ওষুধের শেকড় কি মুথোম্বাসের শেকড় তুলতে এসেচে। অনেক সময় রাত্রেই ওষুধের গাছ তুলতে হয়, সে জানে। তার ভয়ও হচ্ছিল, চারিদিকে অন্ধকার, নদীর জলের ছলাৎ ছলাখ শব্দ হচ্ছে ডাঙায় ছোট ছোট ঢেউ লেগে । এখানে ভূতের উপদ্রবের কথা অনেকে বলে, শ্মশান এখান থেকে খুব বেশী দূরে নয়। নিতাইয়ের গা-টা ছমছম করে উঠলো। তার বাবা ওপরে গিয়ে পাহাড়ের গা খুড়তে লাগলো। সে নিচে থেকে অন্ধকারে তেমন কিছু দেখতে পাচ্ছে না বাবা কি খুঁজচে । একবার সে বললে, “কি বাবা, মুথোর শেকড় ?” বামাচরণ চাপাগলায় বললে, “আম, চুপ কর না! মই ধরে থাকৃ, তোর সে কথায় দরকার কি ?” নিতাই চুপ করে রইলো, কিন্তু ওষুধ খুড়তেও কি এত সময় লাগে ? সে অন্ধকারের মধ্যে মইয়ের নীচে এক দাড়িয়ে অত্যন্ত অশাস্তি বোধ করছিল, বাবার ভয়ে কিছু বলতেও পারছে না । অবশেষে অতি কষ্টে ভারী ও কালো একটা কলসী নিয়ে বামাচরণ মই থেকে নামলো । নিতাই অবাকৃ হয়ে বললে, “কি বাবা এতে ?” “চুপ কর না, কেবল চেঁচামেচি ! তোর সব কথায় কি দরকার ? শাবল আর মইট। নিতে পারবি একলা ?” কেউ না দেখে এজন্যে বামাচরণ বাশবনের পথ দিয়ে চললো। বেশী রাত্রে গ্রামে চৌকিদার পাহারা দিতে বার হয়, কি জানি যদি সে এ অবস্থায় হঠাৎ চৌকিদারের সামনেই পড়ে যায় ? বামাচরণের বুকের মধ্যে পিচিপ করচে। কলসীটা,বেজায় ভারী। নিশ্চয়ই কোনো ভারী জিনিসে ভত্তি। কলসীর মুখটা একখানা পাথরের ছোট খুরি দিয়ে চাপা ছিল—বহুদিন মাটির মধ্যে থাকার দরুণ সেটা এমন দারুণ এটে গিয়েচে যে অস্ত্র দিয়ে চাড় না দিলে খোলা স্বাবে না । বাড়ী পৌঁছেই বামাচরণ বাইরের দরজা বন্ধ করে দিলে। স্ত্রীকে বললে, “একটা আলো নিয়ে এসো তো ?” ওর আর বিলম্ব সুইচে না। এখুনি সে কলসীর মুখ খুলে দেখবে। নিতাইয়ের মা একটা কাচ-ভাঙা সেকেলে হিষ্কসের লণ্ঠন নিয়ে উচু করে ধরলে। বিস্ময়ের স্বরে বললে, “কলসীটাতে কি ? মড়ার কলসীর মতো দেখতে,—ওটাকে আনলে কোথা থেকে গো ?” অধীর কৌতুহলে ও আগ্রহে বামাচরণ শাবলের এক ঘা দিয়ে কলসীটা ফাটিয়ে ফেললে—