পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/২৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৮২ বিভূতি-রচনাবলী লোকটি এদিক ওদিক চেয়ে স্বর নামিয়ে বললে—আজ আর বলব না। এইখানে কাল আপনি আসতে পারবেন ? —কেন পারব না ? –তাই আসবেন কাল । আচ্ছা বাবু, আপনি পুরানো লিখা পড়তে পারেন ? স্বশীল একটু আশ্চৰ্য্য হয়ে ওর মুখের দিকে চেয়ে বললে—কী লেখা ? —সে কাল বাংলাবো। আপনি কাল এখানে আসবেন, তবে, বেলা থাকতে আসবেন— স্বর্য ডুববার আগে । মামার বাসায় এসে কৌতুহলে স্বশীলের রাতে চোখে ঘুমই এল না। এক-একবার তার মনে হল, জাহাজী মাল্লা কত দূর কত দেশ ঘুরেছে, কোন এক আশ্চৰ্য্য ব্যাপারের কথা কি তাকে বলবে ? কোন নতুন দেশের কথা ? পুরনো লেখা কিসের ?--- ওর ছোট মামাতে ভাই সনৎ ওর পাশেই শোয়। গরমে তারও চোখে ঘুম নেই। খানিকটা উশখুশ করার পরে সে উঠে স্বইচ টিপে আলো জাললে। বললে—দাদা চা খাবে ? চা করব ? —এত রাত্তিরে চা কী রে ? —কী করি বল । ঘুম আসছে না চোখে— খাও একটু চা । সনৎ ছেলেটিকে স্বশীল খুব পছন্দ করে । কলেজে ফাস্ট ইয়ারের ছাত্র, লেখাপড়াতেও ভাল, ফুটবল খেলায় এরই মধ্যে বেশ নাম করেছে, কলেজ টমের বড়-বড় ম্যাচে খেলবার সময় ওকে ভিন্ন চলে না। সনৎ-এর আর একটা গুণ, ভয় বলে কোন জিনিস নেই তার শরীরে । মনে হয় দুনিয়ার কোন কিছুকে সে গ্রাহ করে না। দু-বার এই স্বভাবের দোষে তাকে বিপদে পড়তে হয়েছিল, একবার খেলার মাঠে এক সার্জেণ্টের সঙ্গে মারামারি করে, নিজে তাতে মার খেয়েছিলও খুব—মার দিয়েছিলও। সেবার ওর বাবা টাকাকড়ি খরচ করে ওকে জেলের দরজা থেকে ফিরিরে আনেন। আর একবার মাহেশের রথতলায় একটি মেয়েকে গুণ্ডাদের হাত থেকে বঁাচাতে গিয়ে গুণ্ডার ছুরিতে প্রায় প্রাণ দিয়েছিল আর-কি। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক যুবকদল ওকে গুণ্ডাদের মাঝখান থেকে টেনে উদ্ধার করে আনে। সুশীল বললে—সনৎ, কতদূর লেখা পড়া করবি ভাবছিস ? —দেখি দাদা। বি. এস.সি. পর্যন্ত পড়ে একটা কারখানায় ঢুকে কাজ শিখব। কলকজার দিকে আমার ক্টোক, সে তো তুমি জানোই— —আমি যদি কোন ব্যবসায় নামি, আমার সঙ্গে থাকবি তুই ? —নিশ্চয়ই থাকব। তুমি যেখানে থাকবে, যা করবে—আমি তাতে থাকি এ আমার বড় ইচ্ছে কিন্তু। কী ব্যবসা করবে ভাবছ দাদা ? 曝錄 —আচ্ছ, কাউকে এখন এসব কিছু বলিল নে ! তোকে আমি জানাবো ঠিক সময়ে। তোকে নইলে আমার চলবে না। চল আজ শুয়ে পড়ি—রাত ছুটে বাজে—