পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৩০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२२8 বিভূতি-রচনাবলী সুশীলের আর্টিস্ট বন্ধু বললে—ওটা ওদের বংশের জিনিস। ওরা পল্লীগ্রামের প্রাচীন ধনী বংশ । - ডা: বস্ব সন্দিগ্ধ মুখে বললেন–কিন্তু এ তো তা নয় ! এ যে বহু পুরোনো জিনিস ! এ আপনারা পেয়েছিলেন কোথায় তার ইতিহাস কিছু জানেন ? যদি বলতে বাধ৷ না থাকে— সুশীল বললে—না ডা: বস্ব, আমি এ সম্বন্ধে কিছু বলতে পারব না। আপনি কী আন্দাজ করছেন ? - ডা: বস্থ বললেন—দেখুন, সীলমোহরের ওপর এ চিহ্ন আমি নিজে কখনো দেখি নি— তবে এই ধরনের পাথরের ওপর সীলমোহর ওঁকারভাটে পাওয়া গিয়েছে। ফরাসী ইন্দোচীনের জঙ্গলের মধ্যে বহু পুরোনো নগরের ধ্বংসস্তুপে । এর সময় নির্দিষ্ট হয়েছে মোটামুটি খ্রীস্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দী। আমাদের মিউজিয়ামেও আছে—কাল যাবেন, দেখাবে। কিন্তু আপনার এটা আরো পুরোনো, আমি একে নির্তয়ে নবম শতাব্দীতে ফেলে দিতে পারি— কিংবা তারও আগে । স্বশীল বললে—আপনার তাই মনে হয় ? —নিশ্চয়ই। নইলে বলতাম না। আর সেইজন্যেই আপনাকে জিগ্যেস করছি আপনাদের পূর্বপুরুষে এটা পেলেন কি করে । এ হল সমূদ্রপারের জিনিস। বাংলা দেশের পাড়াগায়ে আমগাছের ছায়ায় শাস্ত ও নিরীহ জিনিস নিয়ে কারবার—কিন্তু এ সীলমোহরের পেছনে রয়েছে অজানা সমুদ্রে পাড়ি দেওয়ার ছৰ্দাস্ত সাহস, দুর্জয় বিক্রম, যুদ্ধ, রক্তপাত— ভারতবাসী যেদিন সমুদ্রের ওপারে বিদেশে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল, সেই সব দিনের ইতিহাস এ সীলমোহরের সঙ্গে জড়ানো। তাই বলছি, এটা আপনারা পেলেন কী করে ? ওখান থেকে বার হয়ে আসবার সময়ে স্বশীলের মনে টাকার স্বপ্ন ছিল না। ছিল যে স্বদরের, ছঃসাহসিক অভিযানের স্বপ্ন—জামাতুল্লা খালাসীর অত বড় পদ্মরাগ মণিখানার সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক ছিল না। সে এমন এক দিনের স্বপ্ন—যা প্রত্যেক ভারতবাসীর আত্মসম্মানকে জাগ্রত করে, তরুণদের প্রাণে নতুন আশা, উৎসাহ ও আনন্দের সংবাদ আনে বয়ে— তৰু তা স্বলীলের মনে যে ছবি জাগালে তা আদৌ স্পষ্ট নয়—সবই আবছায়া, সবই ধোয়ধোয়। স্বশীল ইতিহাসের ছাত্র নয়। ডাঃ বস্থর শেষ কথা-কটির সঙ্গে যেন এক অদ্ভুত বৈজ্ঞানিক শক্তি মেশানো ছিল—তার চোখের সামনে প্রাচীন কালের স্বদীর্ঘ অলিন্দ বেয়ে তলোয়ার হাতে বর্গে চৰ্ম্মে স্থসজ্জিত বীরের দল সারি সারি চলেছে, মৃত্যুকে তারা ভয় করে নী—অজানা সমূদ্রপথে তাদের বিজয় অভিধান নব উপনিবেশের ইতিহাস স্বাক্ট করে ভাবীকালের অসহায় ও অকৰ্ম্মণ্য সস্তানদের শিরায় শিরায় নতুন রক্তের আলোড়ন এনে দেয় !