পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৩১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

WÒe R বিভূতি-রচনাবলী সে বেচারি আমার মতলব কিছু বুঝলে না। আমি সেই বিদ্রোহী সর্দারকে আর তার চারজন অনুচরকে বললাম ফার্নেসে কয়লা দিতে। এদিকে ইঞ্জিন-রমে টেলিগ্রাফে ইঞ্জিনিয়ারকে পুরোদমে স্টীম দিতে বলেই ওরা ঘরে ঢুকবার সঙ্গে সঙ্গে পুলি ঘুরিয়ে জাহাজ প্রায় পচিশ ডিগ্রি কোণ করে স্টারবোর্ডের দিকে কাত করে ফেললাম। টাল সামলাতে না পেরে ওরা হঠাৎ গিয়ে পড়ল খোলা ফার্নেসের মুখে । লোক ঠিক করা ছিল, তক্ষুণি তারা ওদের ফার্নেসের আগুনে ধাক্কা মেরে ঠেলে দিয়ে ফার্নেসের দরজা ঘটাং করে বন্ধ করে দিলে। সনৎ ও স্বশীল রুদ্ধনিশ্বাপে বললে—তারপর ? —তার পর ? তারপর দু-দিন পরে কতকগুলো আধপোড়া হাড় পোড়া কয়লার ছাইয়ের সঙ্গে ফার্নেস-সাফ-করা কুলি সমূদ্রের জলে ফেলে দিলে । , মিউটিনির শেষ হয়ে গেল । —কেউ টের পেলে না ? —সবগুলো বদমাইশ যখন ও পথে গেল—তখন বাকিগুলো আপনা-আপনিই চুপ করে গেল। ভালমানষির দিন চলে গিয়েছে জানবেন । নিষ্ঠুর হতে হবে, নিৰ্ম্মম হতে হবে—তবে মানুষের অন্যায়ের প্রতিশোধ নিতে পারবেন। স্বশীল বুঝল না এমন নিরীহ ভাল মানুষটির আড়ালে কী করে এমন দৃঢ় ও নিৰ্ম্মম চরিত্র লুকোনো থাকতে পারে। —আর একটা কথা—অস্ত্রশস্ত্র কেমন আছে আপনাদের ? —কিছু না, একটি করে অটোম্যাটিক আছে দু-জনের—তার কার্টিজ নেই । —রাইফেল নেই ? —ভারত থেকে রাইফেল কেনা ? মি: হোসেন, এবার আপনি হাসালেন । ইয়ার হোসেন দ্বিরুক্তি না করে বেরিয়ে চলে গেল এবং কিছুক্ষণ পরে একটা বড় রিভলভার নিয়ে এসে স্বশীলের হাতে দিয়ে বললে—পছন্দ হয় ? —ও, এ তো চমৎকার জিনিস । –এই কিনব তিনটি তিনজনের, আর একটা পুরোনো মেশিনগান— —মেশিনগান কী হবে । --অনেক দরকার আছে । সুশীল ও সনৎ ছু-জনেই দেখলে সে অনেক রকম জানে শোনে। জাহাজ চালানোর যন্ত্ৰাদি কিনবার সময়—তার যে কিছু কিছু বিজ্ঞানের জ্ঞানও আছে—এ পরিচয়ও পাওয়া গেল। চালচলনে, ধরন-ধারণে—লে সৰ্ব্বদাই মনে করিয়ে দেয় যে সে সাধারণ নয়। স্বশীল জামাতুল্লাকে বললে—তুমি বলেছিলে ছশো টাকা হলেই হবে-তে এখন দেখছি পাঁচশো টাকাই মি: হোসেন নিয়ে নিলে নানা ছুতো করে ; হাতে কিন্তু এক পয়সাও ब्रहेण न —কোন ভয় নেই ৰাবুজি, আমি যখন আছি। ও তেমন লোক নয়।