পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৩২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হীরামানিক জ্বলে \ల్సిరి হঠাৎ চীনা কাপ্তেন চিৎকার করে উঠল--সামনে পাহাড়—সামলাও— জামাতুল্লা হালে ছিল, ডাইনে সজোরে হাল মারতেই কান ঘেঁষে কতকগুলো বজ বজে সমূত্রের ফেনা ঘুরভে ঘুরতে ঝড়ের বেগে বেরিয়ে চলে গেল, ফেনাগুলোর মাঝে কালো রঙের কি একটা টানা রেখা যেন ফেনারশিকে দুভাগে চিরে দিয়েছে। ডুবো পাহাড় । ঝড়ের শব্দে কে কী বলে শোনা যায় ন!—তবুও স্বশীল শুনলে, চীন কাপ্তেন চিৎকার করছে—খুব বাচা গিয়েছে ; আর একটু হলেই সব শেষ হত আমাদের ! ইয়ার হোসেন ও স্বশীল বাইরে একচমক দেখতে পেলে—জলের মধ্যে মরণের ফাদ পাতাই বটে ! সাক্ষাৎ মরণের ফাদ ! জামাতুল্লা দাত মুখ খিচিয়ে হলি ধরে আছে। একটু আলগা হলেই এই ভীষণ জায়গায় জাম্ব, বানচাল হয়ে ধান্ত মারবে গিয়ে বা দিকের ডুবো পাহাড়ে। খানিকট। পরে জামাতুল্লার চোখ বড় বড় হয়ে উঠল ভয়ে—একি ! দু-দিকেই যে ডুবো পাহাড় —ডাইনে আর বঁায়ে ! চীন কাপ্তেনকে হেঁকে বললে—কোথা দিয়ে জাহাজ চালাচ্ছ গাধার বাচ্চা ! পাহাড়ের চূড়ো দিয়ে যে ! মারবে এবার— ঝড়ের তুফানের মধ্যে চীনা কাপ্তেনের কথাগুলো অট্টহাস্তের মত শোনা গেল। কী যে সে বললে, জামাতুল্লা বুঝতে পারল না।—কিন্তু যারই ভুল হোক, জাহাজ বাচাতে হবে। সে সমানে পিছনে চেয়ে দেখলে—পাহাড়ের কালো রেখা অতিকায় শুশুকের শিরদাড়ার মত জলের ওপর স্পষ্ট জেগে, মাস্কলের দিকে চেয়ে দেখলে চীনা সারেং সব পাল গুটিয়ে ফেলেছে —কেবল মাঝের বড় মাস্কলে ষোল ফুট চওড়া বড় পালখানা ঝড়ের মুখে ছিড়ে ফালি-ফালি হয়ে অসংখ্য সাদা নিশানের মত উড়ছে। সে দেখলে নিশানগুলোর জন্তে জাহাজখানা এদিকে ওদিকে হেলছে ঘুরছে। চক্ষের নিমেষে সে কোমর থেকে ছুরি বার করে পালের মোট শনের কাছি কাটতে লাগল। একবার করে খানিকটা কাটে, আবার ছুটে গিয়ে হাল টিপে ধরে । অমান্থষিক সাহস ও দৃঢ়তা এবং ক্ষিপ্রতার সঙ্গে পাচ ছ-মিনিটের মধ্যে সে অত বড় মোট রশিটা কেটে ফেললে। ফেলতেই দড়িদড়া ঢিলে পড়ে পাল সড়াং করে অনেকখানি নেমে এল । চীন কাপ্তেন চিৎকার করে বললে—কে রশি কাটলে ? —আমি । —খুব ভাল কাজ করেছ। এবার সামলাও ঠালা ! যদি জানো না কোন কিছু, তবে সবতাতেই সর্দারি করতে আসো কেন ? চীন কাপ্তেন মিথ্যে বলে নি। জামাতুল্লা সভয়ে দেখলে পালে ঢিল পড়াতে জাঙ্ক, এবার জগদল পাথরের মত ভারি হয়ে পড়েছে যেন । পিছন থেকে বাতাস ঠেলা মেরেও তাকে নড়াতে পারছে না—সুতরাং দু-দিকের মরণ ফাদকে অতিক্রম করে বাহির সমূত্রে পড়তে এর