পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৩২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী 8 לט অনেক সময় লেগে যাবে—ইতিমধ্যে বাতাস দিক পরিবর্তন করলেই—বিষম বিপদ । ইয়ার হোসেন পাকা লোক। সে বুঝেছিল কিছু একটা গোলমাল ঘটেছে। মাথা বার করে বললে—কী হল আবার ? জাঙ্ক নড়ে না ষে! চীনা সারেং বললে—নড়বে কী স্তর—নড়বার পথ কি আর রেখেছে জামাতুল্লা ? এবার বঁাচাতে পারলাম না বোধ হয় ! কিন্তু মুখের বিষয় আধঘণ্টার মধ্যে ভয় কেটে গেল। বাতাস পিছন হতেই বয়ে চলল একটানা—এবং আধঘণ্টার মধ্যে জাঙ্ককে ডুবো পাহাড়ের ফাদ পার করে বাহির সমূত্রে তাড়িয়ে দিলে । জামাতুল্লা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল । চীনা কাপ্তেন টিটকিরি দিয়ে বললে—বাচলে সবাই আজ নিতান্ত বরাতের জোরে ! তোমার হাতের গুণে নয়, মনে রেখে । সমুদ্র শাস্ত, জ্যোৎস্না উঠেছে—সুশীলদের দল খোলের ঢাকনি খুলে ডেকের ওপর এসে দাড়াল । হঠাৎ জ্যোৎস্নার মধ্যে দূরে কি একটা বিরাট কালো জিনিস দেখা গেল—জল থেকে উচু হয়ে আছে মাথা তুলে । ইয়ার হোসেন বললে—কী ওটা ? مهمی স্বশীল জিনিসটা প্রথমে দেখতে পেলে না—তারপর দেখে বিস্মিত হল—অস্পষ্ট কুয়াশামাখা জ্যোৎস্নালোকে কিছু ভাল দেখা যায় না—তবুও একটা প্রকাও কৃষ্ণকায় দৈত্যের মত আকাশের গায়ে কী ওটা জল থেকে মাথা তুলে দাড়িয়ে আছে ? সনৎও সেদিকে চেয়ে অবাক হয়ে গেল । একমাত্র জামাতুল্লা দু-চোখ বিস্ফারিত করে জিনিসটার দিকে চেয়ে ছিল। ইয়ায় হোসেন কথার উত্তর না পেয়ে কি একটা বলতে যাচ্ছিল, জামাতুল্লা তাকে হাতের ইঙ্গিতে থামিয়ে দিয়ে ডেকের সম্মুখভাগে এগিয়ে এসে কালো জিনিসটা ভাল করে দেখতে লাগল । # চীনা সারেং টিটুকিরি দেওয়ার স্বরে বললে—দেখছ কী, ওটা ডুবো পাহাড়—বুড়ে বয়সে চোখে ভাল দেখতে পাইনে—তবুও বলছি— স্বশীল বললে—জলের উপর জেগে রয়েছে যে ! ডুবো পাহাড় কী করে হল ? চীনা সারেং বললে—ও পাহাড়ের চুড়োটা মাত্র জেগে আছে জলের ওপর, স্তর। প্রকাও ডুবো পাহাড় ওটা জামাতুল্লা এইবার স্বশীলকে একধারে ডেকে নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বললে—সারেং ঠিক বলেছে। এভক্ষণ পরে আমি চিনেছি, এই সেই পাহাড় বাবুজি—এই পাহাড়ে ধাক্কা খেয়েই— স্বশীল অবিশ্বাসের স্বরে বললে—চিনলে কী করে ?