পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৩৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ჯ)8&) বিভূতি-রচনাবলী জামাতুল্লা বললে—কী দাওয়াই আছে এর মধ্যে বাবুজি ? —তা তুমি আমি কী জানি ? প্রাচীন যুগের লোকের কত অদ্ভুত ধারণা ছিল। হয়ত তাদের বিশ্বাস ছিল এই সবই অমর হওয়ার ওষুধ । হঠাৎ স্বশীল একটা জালার মুখ খুলে বলে উঠল—দেখি, বোধ হয় টাকা! জালা উপুড় করলে তার মধ্যে থেকে পড়ল একরাশ বড় বড় চাকতি, বড় বড় মেডেলের আকারের প্রায় সিকি ইঞ্চি পুরু। স্বশীল একখানা চাকতি হাতে করে বললে—সোনা বলে মনে হয় না ? জামাতুল্লা বললে—আলবৎ সোনা—তবে টাকা বা মোহর নয়। স্বশীল বললে—কোন রকম ছাপ নেই। মুদ্রা করবার জন্যে এগুলো তৈরি করা হয়েছিল —কিন্তু তারপর ছাপ এতে মারা হয় নি। এ অনেক আছে-- সনৎ বললে—সবরকম কিছু কিছু নাও দাদা— জামাতুল্লা বললে—এ যদি সোনা হয়—এই এক জালার মধ্যেই লাখ টাকার সোনা— স্বশীল আর একটা জালা পেড়ে ঢাকনি খুলে উপুড় করে ঢাললে। তার মধ্যেও অবিকল অমনি ধাতব চাকতি—একই আকারের, একই মাপের । জামাতুল্লা বললে—শোভানাল্লা! দু-লাখ হল—মুদি আমরা দেখি সব জালাতেই এ-রকম— এই সময় স্বশীল প্রায় চিৎকার করে বলে উঠল—শিগগির এদিকে এস— ওরা গিয়ে দেখলে অন্ধকার ঘরের কোণে কতকগুলো মামুষের হাড়গোড়—ভাল করে টর্চ ফেলে দেখা গেল, দুটো নরকঙ্কাল ! সেই সূচীভেদ্য অন্ধকার পাতালপুরীর মধ্যে নরকঙ্কাল দুটো যেন ওদের সমস্ত আশা ও চেষ্টাকে দাত বার করে উপহাস করছে। কাল রাত্রের স্বপ্নের কথা ওর মনে এল, মৃত্যুর চেয়ে মহা রহস্ত জগতে কী আছে ? মূঢ় লোকে চারিপাশে মৃত্যু অহরহ দেখছে, অথচ ভাবে না কৗ গভীর রহস্তপুরীর দ্বারপাল-স্বরূপ ইহলোক ও পরলোকের পথে মৃত্যু আছে দাড়িয়ে।. নরকঙ্কালটি কী কথা না জানি বলত যদি এরা এদের মরণের ইতিহাস ব্যক্ত করতে পারত ! সে হয়ত দুনিবার লোভ ও নৃশংস অর্থলিন্সার ইতিহাস, হয়ত তা রক্তপাতের ইতিহাস, জীবন মরণ নিয়ে খেলার ইতিহাস, ভাই হয়ে ভায়ের বুকে ছুরি বসানোর ইতিহাস••• জামাতুঙ্গ কঙ্কালগুলো সরিয়ে রাখতে গিয়ে বললে—হাড় ভেঙে যাচ্ছে বাবুজি, বহুং পুরোনে আমলের হাড়গোড় এ সব। কমসে কম একশো দেড়শো বছরের পুরনো—কিন্তু দেখুন বাবুজি মজা, হাড়ের গায়ে এসব কী ? ওরা হাতে করে নিয়ে দেখলে। প্রায় এক ইঞ্চি করে লবণের স্তর শক্ত হয়ে জমাট বেঁধে আছে কঙ্কালের ওপরে। বুশীল ভাল করে টর্চের জালো ফেলে বললে—চোখের কোটরগুলো স্থনে বুজোনো—স্তাখে চেয়ে! এর যে কী কারণ ওরা কিছুই ঠিক করতে পারলে না । অন্ধকার পাতালপুরীর শহরে ওদের হাড়ে জুন মাখাতে এসেছিল কে ?