পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চাদের পাহাড় ৫৯ করে চেষ্টা করে নি, এখন এগুলো বোঝার ওপর তার জীবন-মরণ নির্ভর করছে। সল্স্বেরির সোজা রাস্ত বার করতে হবে। এ স্থান থেকে তার অবস্থিতি-বিন্দুর দিক নির্ণয় করতে হবে, রিখটারসভেল্ড, অরণ্যের এ গোলকধাঁধা থেকে তাকে উদ্ধার পেতে হবে-—সবই এই ম্যাপগুলির সাহায্যে । অনেক দেখবার শোনবার পরে ও বুঝতে পারলে এই অরণ্য পৰ্ব্বতমালার সম্বন্ধে কোনো ম্যাপেই বিশেষ কিছুই দেওয়া নেই—এক আলভারেজের ও জিম কার্টারের খসড়া ম্যাপখান ছাড়া । তাও এত সংক্ষিপ্ত এবং তাতে এত সাঙ্কেতিক ও গুপ্তচিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে যে, শঙ্করের পক্ষে তা প্রায় দুৰ্ব্বেৰ্ণধ্য। কারণ এদের সব সময়েই ভয় ছিল যে ম্যাপ অপরের হাতে পড়লে, পাছে আর কেউ এসে ওদের ধনে ভাগ বসায় । চতুর্থ দিন শঙ্কর সে-স্থান ত্যাগ করে আন্দাজ মত পূৰ্ব্বদিকে রওনা হল। যাবার আগে কিছু বনের ফুলের মালা গেথে আলভারেজের সমাধির ওপর অর্পণ করলে। ‘বুশ, ক্র্যাফট বলে একটা জিনিস আছে। সুবিস্তীর্ণ, বিজন, গহন অরণ্যানীর মধ্যে ভ্রমণ করবার সময়ে এ বিদ্যা জানা না থাকলে বিপদ অবশ্যম্ভাবী। আলভারেজের সঙ্গে এতদিন ঘোরাঘুরি করার ফলে, শঙ্কর কিছু কিছু বুশ, ক্র্যাফট’ শিখে নিয়েছিল, তবুও তার মনে সন্দেহ হল যে, এই বন এক পাড়ি দেবার যোগ্যতা সে কি অজ্জন করেছে? শুধু ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে তাকে চলতে হবে, ভাগ্য ভাল হয় বন পার হতে পারে, ভাগ্য প্রসন্ন না হয়—মৃত্যু। দুটো তিনটে ছোট পাহাড় সে পার হয়ে চলল। বন কখনো গভীর, কখনো পাতলা । কিন্তু বৃহৎ বৃহৎ বনস্পতির আর শেষ নেই। শঙ্করের জানা ছিল যে, দীর্ঘ এলিফ্যান্ট, ঘাসের জঙ্গল এলে বুঝতে হবে যে বনের প্রাস্তসীমায় পৌছানো গিয়েছে। কারণ গভীর জঙ্গলে কখনো এলিফ্যান্ট, বা টুসক ঘাস জন্মায় না। কিন্তু এলিফ্যান্ট, ঘাসের চিহ্ন নেই কোনোদিকে—শুধুই বনস্পতি আর নীচু বনবোপ। প্রথম দিন শেষ হল এক নিবিড়তর অরণ্যের মধ্যে। শঙ্কর জিনিসপত্র প্রায় সবই ফেলে দিয়ে এসেছিল, কেবল আলভারেজের ম্যানলিকার রাইফেলট, অনেকগুলো টোটা, জলের বোতল, টর্চ, ম্যাপগুলো, কম্পাস, ঘড়ি, একখানা কম্বল ও সামান্য কিছু ঔষধ সঙ্গে নিয়েছিল —আর নিয়েছিল একটা দড়ির দোলন। র্তাবুটা যদিও খুব হালকা, কিন্তু তা সে বয়ে আনা অসম্ভব বিবেচনায় ফেলেই এসেছে। দুটাে গাছের ডালে মাটি থেকে অনেকট উচুতে সে দড়ির দোলন টাঙালে এবং হিংস্র জন্তুর ভয়ে গাছতলায় আগুন জালালে। দোলনায় শুয়ে বন্দুক হাতে জেগে রইল কারণ ঘুম অসম্ভব। একে ভয়ানক মশা, তার ওপর সন্ধ্যার পর থেকেই গাছতলার কিছুদূর দিয়ে একটা চিতাবাঘ যাতায়াত শুরু করলে। গভীর অন্ধকারে তার চোখ জলে যেন দুটো আগুনের ভাটী ; শঙ্কর টর্চের আলো ফেলে, পালিয়ে যায়, আবার আধঘণ্টা পরে ঠিক সেইখানে দাড়িয়ে ওর দিকে চেয়ে থাকে। শঙ্করের ভয় হল, ঘুমিয়ে পড়লে হয়তো বা লাফ