পাতা:বিভূতি রচনাবলী (নবম খণ্ড).djvu/৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ه/رع ছোটদের চোখে সহজেই ধরা পড়ে, তেমনি জগতের ভয়ঙ্করতম সর্বনাশও তারা বিনা বাক্যব্যয়ে গ্রহণ করে। পৃথিবীর বেবাক শিশু-কাহিনী ঘাটলেও এই কথাই মনে হয়। যদি ভেবে দেখা যায় যাবতীয় লোক-কথার, রূপ-কথার পরীদের শিশুপাঠ্য গল্পের বিষয়-বস্তু কি, তা হলে এই সত্য আবিষ্কার করে স্তম্ভিত হতে হয় ষে সেগুলির সঙ্গে ছোটদের জীবনের কম-ই সম্বন্ধ থাকে । সেগুলির বিষয়বস্তুই হল বড়দের লোভ, হিংসা, দ্বেষ, ব্যর্থ প্রেম, বিশ্বাসঘাতকতা, প্রতিশোধ, নিষ্ঠুরতা। এর কোনটিকে শিশুদের কোমল মনের উপযুক্ত বলা চলে ? অথচ এই গল্পগুলিই আমাদের ছোটবেলায় নিশ্বাস বন্ধ করে পাঠ করে আমরা হাসি-কান্নার আনন্দ-সাগরে ভেসেছি। আসলে বিষয়গত অর্থের চেয়ে মর্মগত অর্থটি ছোটদের মনকে বেশি অধিকার করে। দুঃখীদের হারানো"ছেলেমেয়ে ফিরে আসে, বুভূক্ষুরা পেট ভরে খেতে পায়, ডুবন্ত নৌকে আবার উদ্ধার হয়, ওদের পক্ষে তাই যথেষ্ট । এই গ্রন্থে বিভূতিভূষণের পাঁচটি ছোটদের বই সম্বলিত হয়েছে। তার মধ্যে চারটি নিছক দুঃসাহসিক অভিযানের গল্প, ইংরিজিতে যাকে বলে অ্যাডভেঞ্চার স্টরি । একটি হল ছোট গল্পের সংগ্রহ, তার মধ্যেও রহস্য ও রোমাঞ্চের অভাব নেই । এ ধরণের কাহিনীর প্রধান উপজীব্যই হল রহস্য ও রোমাঞ্চ এবং প্রধান অবলম্বন হল সাহসিকতা। এদের একটা মোটামুটি মামুলী কাঠামোও দেখতে পাওয়া যায়, যদিও ঘটনাগুলি বিচিত্র। হয়তো এক বা একাধিক উৎসাহী কিম্বা ভাগ্য-বিড়ম্বিত মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ির নিশ্চিন্ত নিরাপত্তা ছেড়ে বিষম বিপদ-সস্কুল পথে, রোমাঞ্চময় অভিজ্ঞতার আশায়, কিম্বা অবাস্তব আলেয়ার পিছনে বেরিয়ে পড়ে। সব সময় বেরোতেও হয় না ; বিপদ আর লোমহর্ষণ অভিজ্ঞতা আপনি এসে ঘাড়ে চাপে । নায়ক গোড়াতে খুব ইচ্ছুক বা সাহসী না-ও হতে পারে। কিন্তু পাকে-চক্রে পড়ে তার মনুষ্যত্ব প্রকট হয়, কিম্বা তার অধোগ্যতা প্রমাণ হয়। শেষ পর্যন্ত গুপ্তধনটিকে অকিঞ্চিৎকর বলে মসে হয় । অনেক অভিভাবক এই সব মন-গড়া অভিযানের কাহিনী পছন্দ করেন না। বিশেষ করে যখন পৃথিবীর বাস্তব ইতিহাসে দুঃসাহসিক ঘটনার অভাব নেই। তাদের মতে এ-ধরণের আজগুবি গল্প তরুণ পাঠকের বুদ্ধিবিভ্রম ঘটায়, এতে বাস্তবের পথ ছেড়ে মনকে মরীচিকার পিছনে ধাবিত করানো হয়। তবু মনে হয় আজগুবি ও অবাস্তবকে প্রত্যাখ্যান করলে বিশ্বসাহিত্য কানা হয়ে যাবে। কোনটা বাস্তব সত্য আর কোনটা কল্পনা এটুকু জানলেই যথেষ্ট । অধিকাংশ সময়ই গল্পের ভূমিকাতে সে-কথা স্পষ্ট করে বলে দেওয়াই থাকে। ১৩৪৪ সালে লেখা ‘চাদের পাহাড়ে'র ভূমিকায় বিভূতিভূষণ বলছেন, "চাঁদের পাহাড় কোনও ইংরিজি উপন্যাসের অনুবাদ নয়, বা ঐ শ্রেণীর কোনও বিদেশী গল্পের ছায়াবলম্বনে লিখিত নয়। এই বইয়ের গল্প ও চরিত্র আমার কল্পনাপ্রস্থত। তবে আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলের সংস্থান ও প্রাকৃতিক দৃশ্বের বর্ণনাকে প্রকৃত অবস্থার অস্থযায়ী করবার জন্য আমি-"কয়েকজন বিখ্যাত ভ্রমণকারীর গ্রন্থের সাহায্য গ্রহণ করেছি। -- এই গল্পে উল্লিখিত রিখটারসভেল্ড পর্বতমালা মধ্য-আফ্রিকার অতি প্রসিদ্ধ পর্বতশ্রেণী এবং ডিঙ্গোনাক ও বুনিপের প্রবাদ