পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

-- ט\"מ আমার বলিল—লোকে বলেছিল হুজুর, বয়ড়া লতা জন্মিবে, বাড়বেও বটে, কিন্তু ওর ফুল ধরবে না। সব লতায় নাকি ফুল ধরে না । দেখুন কেমন কুঁড়ি এসেছে। হ্রদের জলে ‘ওয়াটার ক্রোফট বলিয়া এক প্রকার জলজ ফুলের গেড় পুতিয়াছিলাম। সে গাছ হু হু করিয়া এত বাড়িতে লাগিল যে, যুগলপ্রসাদের ভয় হইল জলে পদ্মের স্থান বুঝি ইহার বেদখল করিয়া ফেলে। বোগেনভিলিয়া লতা লাগাইবার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু শহরের শৌধীন পার্ক বা উষ্ঠানের সঙ্গে এতই ওর সম্পর্কট জড়ানো যে আমার ভয় হইল সরস্বতী কুণ্ডীর বনে ফুলে-ভরা বোগেনভিলিয়ার ঝোপ উহার বস্ত আকৃতি নষ্ট করিয়া ফেলিবে । যুগলপ্রসাদেরও এসব বিষয়ে মত আমার ধরণের। সেও বারণ করিল। অর্থব্যয়ও কম করি নাই। একদিন গনোরী তেওয়ারীর মুখে শুনিলাম, কারো নদীর ওপারে জয়ন্ত্ৰী পাহাড়ের জঙ্গলে এক প্রকার অদ্ভুত ধরণের বনপুষ্প হয়—ওদেশে তার নাম দুধিয়া ফুল। হলুদ গাছের মত পাতা, অত বড়ই গাছ—খুব লম্বা একটা ডাটা ঠেলিয়া উচুদিকে তিন-চার হাত ওঠে। একটা গাছে চার-পাচটা ডাটা হয়, প্রত্যেক ডাটায় চারটি করিয়া হলদে রঙের ফুল ধরে—দেখিতে খুব ভাল তো বটেই, ভারি সুন্দর তার সুবাস । রাত্রে অনেক দূর পর্য্যন্ত মুগন্ধ ছড়ায়। সে ফুলের একটা গাছ যেখানে একবার জন্মায় দেখিতে দেখিতে এত হু-হু বংশ বৃদ্ধি হয় যে, দু-তিন বছরে রীতিমত জঙ্গল বাধিয়া যায়। শুনিয়া পৰ্য্যস্ত আমার মনের শাস্তি নষ্ট হইল। ঐ ফুল আনিতেই হইবে। গনোরী বলিল, বর্ষাকাল ভিন্ন হইবে না ; গাছের গেড় আনিয়া পুতিতে হয়—জল না পাইলে মরিয়া যাইবে । পয়সা-কড়ি দিয়া যুগলপ্রসাদকে পাঠাইলাম। সে বহু অনুসন্ধানে জয়ন্তী পাহাড়ের দুর্গম জঙ্গল হইতে দশ-বারে গও গেড় যোগাড় করিয়া আনিল । নবম পরিচ্ছেদ X প্রায় তিন বছর কাটিয়া গিয়াছে। এই তিন বছরে আমার অনেক পরিবর্তন ঘটিয়াছে। লবটুলিয়া ও আজমাবাদের বস্ত প্রকৃতি কি মায়া-কাজল লাগাইয়া দিয়াছে আমার চোখে—শহরকে একরকম ভুলিয়া গিয়াছি। নির্জনতার মোহ, নক্ষত্রভরা উদার আকাশের মোহ আমাকে এমন পাইয়া বসিয়াছে যে, মধ্যে একবার কয়েক দিনের জন্য পাটনায় গিয়া ছটফট, করিতে লাগিলাম কবে পিচ-ঢালা বাধা-ধর রাস্তার গণ্ডি এড়াইয়া চলিয়া যাইব লবটুলিয়া বষ্টহারে,—পেয়ালার মত উপুড়-করা নীল আকাশের তলে মাঠের পর মাঠ, অরণ্যের পর অরণ্য, যেখানে তৈরী রাজপথ নাই, ইটের