পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

TੋT বিভূতি-রচনাবলী ছটু সিং ঘোরাঘুরি করিতে লাগিল—আমি তাহার দরখাস্ত সদরে পাঠাইয়া দিয়া ধ্বংসলীলাকে কিছু বিলম্বিত করিবার চেষ্টা করিলাম। २ একদিন লবটুলিয়া জঙ্গলের উত্তরে নাঢ় বইহারের মুক্ত প্রান্তরের মধ্য দিয়া দুপুরের পরে আসিতেছি—দেখিলাম, একখানা পাথরের উপর কে বসিয়া আছে পথের ধারে । তাহার কাছে আসিয়া ঘোড়া থামাইলাম। লোকটির বয়স ষাটের কম নয়, পরনে ময়লা কাপড়, একটা ছেড়া চাদর গায়ে । এ জনশূন্ত প্রান্তরে লোকটা কি করিতেছে এক বসিয়া ? সে বলিল-আপনি কে বাৰু ? বলিলাম—আমি এখানকার কাছারির কৰ্ম্মচারী। —আপনি কি ম্যানেজারবাৰু? —কেন বল তো ? তোমার কোন দরকার আছে ? হ্যা, আমিই ম্যানেজার। লোকটা উঠিয়া আমার দিকে আশীৰ্ব্বাদের ভঙ্গিতে হাত তুলিল। বলিল—হজুর, অামার নাম মটুকনাথ পাড়ে, ব্রাহ্মণ, আপনার কাছেই যাচ্ছি। —কেন ? —হজুৰ, আমি বড় গরীব। অনেক দূর থেকে হেঁটে আসছি হজুরের নাম শুনে। তিন দিন থেকে ইটিছি পথে পথে । যদি আপনার কাছে চলাচলতির কোন একটা উপায় হয়— আমার কৌতুহল হইল, জিজ্ঞাসা করিলাম—ক’দিন জঙ্গলের পথে তুমি কি খেয়ে আছ ? মটুকনাথ তাহার মলিন চাদরের একপ্রান্তে বাধা পোয়াটাক কলাইয়ের ছাতু দেখাইয়৷ বলিল—সেরখানেক ছাতু ছিল এতে বাধ, এই নিয়ে বাড়ী থেকে বেরিয়েছিলাম। তাই ক'দিন খাচ্ছি। রোজগারের চেষ্টার বেড়াচ্ছি হুজুর—আজ ছাতু ফুরিয়ে এসেছে, ভগবান জুটিয়ে দেবেন আবার । আজমাবাদ ও নাঢ় বইহারের এই জনশূন্ত বনপ্রান্তরে উড়ানির খুটে ছাতু বাধিয়া লোকটা কি রোজগারের প্রত্যাশায় আসিয়াছে বুঝিতে পারিলাম না । বলিলাম—বড় বড় শহর ভাগলপুর, পূর্ণিয়া, পাটনা, মুঙ্গের ছেড়ে এ জঙ্গলের মধ্যে এলে কেন পাড়েজী ? এখানে কি হবে ? লোক কোথায় এখানে ? তোমাকে দেবে কে ? মটুকনাথ আমার মুখের দিকে নৈরাশুপূর্ণ দৃষ্টিতে চাহিয়া বলিল—এখানে কিছু রোজগার হবে না বাৰু? তবে আমি কোথায় যাব ? ও সব বড় শহরে আমি কাউকে চিনি নে, রাস্তাঘাট চিনি নে, আমার ভয় করে। তাই এখানে যাচ্ছিলাম— লোকটাকে বড় অসহায়, দুঃখী ও ভালমানুষ বলিয়া মনে হইল। সঙ্গে করিয়া কাছারিতে লইয়া আসিলাম ।