পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক సిలీ দিশ্বলয়সীমা পৰ্যন্ত হলুদ রঙের গালিচার ঢাকা–এর মধ্যে ছেদ নাই, বিরাম নাই—উপরে নীল আকাশ, ইন্দ্ৰনীলমণির মত নীল—তার তলায় হলুদ-হলুদ রঙের ধরণী, যতদূর দৃষ্টি যায়। ভাবিলাম, এও একরকম মন্দ নয়। একদিন নূতন গ্রামগুলি পরিদর্শন করিতে গেলাম। ছটু সিং বাদে সকলেই গরীব প্রজা। তাহাদের জন্ত একটি নৈশ স্কুল করিয়া দিব ভাবিলাম—অনেক ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে সর্ধেক্ষেতের ধারে ধারে ছুটাছুটি করিয়া খেলা করিতে দেখিয়া আমার নৈশ স্কুলের কথা আগে মনে পড়িল । কিন্তু শীঘ্রই নূতন প্রজারা ভয়ানক গোলমাল বাধাইল। দেখিলাম ইহার মোটেই শান্তিপ্রিয় নয়। একদিন কাছারিতে বসিয়া আছি, খবর আসিল নাঢ়_বইহারের প্রজার নিজেদের মধ্যে ভয়ানক দাঙ্গা শুরু করিয়াছে, যাহার পাচ-বিঘা জমি সে দশ-বিঘা জমির ফসল দখল করিতে বসিয়াছে। আরও শুনিলাম সর্ষে পাকিবার কিছুদিন আগে ছটু সিং নিজের দেশ হইতে বহু রাজপুত লাঠিয়াল ও সড়কিওয়ালা গোপনে আনিয়া রাখিয়াছিল, তাহার আসল উদ্দেশ্য এখন বোঝা যাইতেছে। নিজের তিন-চার শ বিঘা আবাদী জমির ফসল বাদে সে লাঠির জোরে সমস্ত নাঢ় বইহারের দেড় হাজার বিঘা (বা যতটা পারে) জমির ফসল দখল করিতে চায় । কাছারির আমলার বলিল—এ-দেশের এই নিয়ম হুজুর। লাঠি যার ফসল তার। যাহাদের লাঠির জোর নাই, তাহার কাছারিতে আসিয়া আমার কাছে কাদিয়া পড়িল । তাহারা নিরীহ গরীব গাঙ্গোত প্রজা—সামান্ত দু-দশ বিঘা জমি জঙ্গল কাটিয়া চাষ করিয়াছিল, স্ত্রী-পুত্র আনিয়া জমির ধারেই ঘর-বাড়ী করিয়া বাস করিতেছিল—এখন সারা বছরের পরিশ্রমের ও আশার সামগ্রী প্ৰবলের অত্যাচারে যাইতে বসিয়াছে ! কাছারির দুইজন সিপাহীকে ঘটনাস্থলে পাঠাইয়াছিলাম ব্যাপার কি দেখিতে t - উৰ্দ্ধশ্বাসে ছুটিয়া আসিয়া জানাইল—ভীমদাস টােলার উত্তর সীমায় ভয়ানক দাদা ব: y তখনই তহশীলদার সজ্জন সিং ও কাছারির সমস্ত সিপাহীদের লইয়া ঘোড়াk.s ঘটনাস্থলে রওনা হইলাম। দূর হইতে একটা হৈ হৈ গোলমাল কানে আসিল। নাঢ়া বইহারের মাঝখান দিয়া একটি ক্ষুদ্র পাৰ্ব্বত্য নদী বহিরা গিয়াছে—গোলমালটা যেন সেদিকেই বেশী । নদীর ধারে গিয়া দেখি নদীর দুইপারেই লোক জড় হইয়াছে—প্রায় যাটসত্তর জন এপারে, ওপারে ত্রিশ-চল্লিশ জন ছটু সিং-এর রাজপুত লাঠিয়াল। ওপারের লোক এপারে আসিতে চায়, এপারের লোকেরা বাধা দিতে দাড়াইয়াছে। ইতিমধ্যে জন দুই লোক জখমও হইয়াছে —তাহারা এপারের দলের। জখম হইয়া নদীর জলে পড়িয়াছিল, সেই সময় ছটু সিং-এর , লোকের টাঙি দিয়া একজনের মাথা কাটিতে চেষ্টা করে—এ-পক্ষ ছিনাইয়া নদী হইতে উঠাইয়া আনিতেছে। নদীতে অবশ্ন পা ডোবে না এমনি জল, পাহাড়ী নদী, তার উপর ' শীতের শেষ । -