পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sbo বিভূতি-রচনাবলী ব্যাপারটা কি ? —হজুৰ, সে অনেক দিনের কথা। কুলী নদীর পুল তখনও তৈরী হয় নি। কাটারিয়ার জোড়া খেয়া ছিল, গাড়ীর প্যাসেঞ্জার খেয়ায় মালমুদ্ধ পারাপার হত। আমরা তখন ঘোড়ার নাচ নিয়ে খুব উন্মত্ত, আমি আর ছাপরার ছটু সিং। ছটু সিং হরিহরছত্র মেলা থেকে ঘোড়া নিয়ে আসত, আমরা দুজন সেই সব ঘোড়াকে নাচ শেখাতাম, তারপর বেশী দামে বিক্রী করতাম। ঘোড়ার নাচ দু-রকম, জমৈতি আর ফনৈতি। জমৈতিতে যে-সব ঘোড়ার তালিম বেশী, তারা বেশী দামে বিক্ৰী হয়। ছটু সিং ছিল জমৈতি নাচ শেখাবার ওস্তাদ। দুজনে তিন-চার বছরে অনেক টাকা করেছিলাম । একবার ছটু সিং পরামর্শ দিলে ঢোলবাজ্য জঙ্গলে লাইসেন্স নিয়ে বুনো মহিষ ধরে ব্যবসা করতে। সব ঠিকঠাক হল, ঢোলবাজা দ্বারভাঙ্গ মহারাজের রিজার্ভ ফরেস্ট, । আমরা কিছু টাকা খাইয়ে বনের আমলাদের কাছ থেকে পোরমিট আনালাম। তার পর ক'দিন ধরে ঘন জঙ্গলের মধ্যে বুনো মহিষের যাতায়াতের পথের সন্ধান করে বেড়াই। অত বড় বন হুজুর, একটা বুনো মহিষের দেখা যদি কোন দিন মেলে! শেষে এক বুনো সাওতাল লাগালাম। সে একটা বাশবনের তলা দেখিয়ে বললে, গভীর রাত্রে এই পথ দিয়ে বুনো মহিষের জেরা ( দল ) জল খেতে যাবে। সেই পথের মধ্যে গভীর খানা কেটে তার ওপর বঁাশ ও মাটি বিছিয়ে ফাদ তৈরী করলাম। রাত্রে মহিষের জেরা যেতে গিয়ে গৰ্ত্তের মধ্যে পড়বে। সাওতালটা দেখে শুনে বললে—কিন্তু সব করছিল বটে তোরা, একটা কথা আছে । ঢোলবাজ্য জঙ্গলের বুনো মহিষ তোরা মারতে পারবি নে। এখানে ট'ড়বারো আছে। আমরা তো অবাক । টপড়বারো কি ? সাঁওতাল বুড়ে বললে—টীড়বারো হল বুনো মহিষের দলের দেবতা। সে একটাও বুনো মহিষের ক্ষতি করতে দেবে না। ছটু সিং বললে—ওসব বুট, কথা। আমরা মানি নে। আমরা রাজপুত, সাওতাল নই। তার পর কি হল শুনলে অবাক হয়ে যাবেন হুজুর। এখনও ভাবলে আমার গায়ে কাটা দেয়। গহিন রাতে আমরা নিকটেই একটা বঁাশঝাড়ের আড়ালে অন্ধকারে নিশব্দে দাড়িয়ে আছি, বুনো মহিষের দলের পায়ের শব্দ শুনলাম, তারা এদিকে আসছে। ক্রমে তারা খুব কাছে এল, গৰ্ত্ত থেকে পঞ্চাশ হাতের মধ্যে। হঠাৎ দেখি গর্তের ধারে, গৰ্ত্তের দশ হাত দূরে এক দীর্ঘাকৃতি কালোমত পুরুষ নিঃশব্দে হাত তুলে দাড়িয়ে আছে। এত লম্বা সে-মূৰ্ত্তি, যেন মনে হল বাশঝাড়ের আগায় ঠেকেছে । বুনো মহিষের দল তাকে দেখে থমকে দাড়িয়ে গেল, তারপর ছত্রভঙ্গ হয়ে এদিক ওদিক পাললি, ফঁাদের ত্রিসীমানাতে এল না একটাও বিশ্বাস করুন আর না করুন, নিজের চোখে দেখা । তার পর আরও দু-একজন শিকারীকে কথাটা জিজ্ঞেস করেছি, তারা আমাদের বললে, ও-জঙ্গলে বুনো মহিষ ধরবার আশা ছাড়। টপড়বারো একটা মহিষও মারতে ধরতে দেবে না। আমাদের টাকা দিয়ে পোরমিট আনানো সার হল, একটা বুনো মহিষও সেবার :