পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জারণ্যক సిన ফাঁদে পড়ল না। * দশরথ ঝাণ্ডাওয়ালার গল্প শেষ হইলে লবটুলিয়ার পাটোয়ারীও বলিল—আমরাও ছেলেবেলা থেকে টাড়বারোর গল্প শুনে আসছি। টাড়বারো বুনো মহিষের দেবতা—বুনো মহিষের দল বেঘোরে পড়ে প্রাণ না হারায়, সে দিকে তার সর্বদা দৃষ্টি। গল্প সত্য কি মিথ্যা আমার সে-সব দেখিবার আবশ্বক ছিল না, আমি গল্প শুনিতে শুনিতে অন্ধকার আকাশে জ্যোতিৰ্ম্ময় খড়গধারী কালপুরুষের দিকে চাহিতাম, নিস্তব্ধ ঘন বনানীর উপর অন্ধকার আকাশ উপুড় হইয়া পডিয়াছে, দূরে কোথায় বনের মধ্যে বস্ত কুকুট ডাকিয়া উঠিল ; অন্ধকার ও নিঃশব্দ আকাশ, অন্ধকার ও নিঃশব্দ পৃথিবী শীতের রাত্রে পরস্পরের কাছাকাছি আসিয়া কি যেন কানাকানি করিতেছে—অনেক দূরে মোহনপুরা অরণ্যের কালে সীমারেখার দিকে চাহিয়া এই অশ্রুতপূৰ্ব্ব বনদেবতার কথা মনে হইয়া শরীর যেন শিহরিয়া উঠিত। এই সব গল্প শুনিতে ভাল লাগে, এই রকম নির্জন অরণ্যের মাঝখানে ঘন শীতের রাত্রে এই রকম আগুনের ধারে বসিয়াই। দশম পরিচ্ছেদ X পনের দিন এখানে একেবারে বঙ্গ-জীবন যাপন করিলাম, যেমন থাকে গাঙ্গোতারা কি গরীব ভুইহার বামুনরা। ইচ্ছা করিয়া নয়, অনেকটা বাধ্য হইয়াই থাকিতে হইল এ ভাবে। এ জঙ্গলে কোথা হইতে কি আনাইব ? খাই ভাত ও বনধুধুলের তরকারি, বনের কাকরোল কি মিষ্টি আলু তুলিয়া আনে সিপাহীরা, তাই ভাজ বা সিদ্ধ। মাছ দুধ ঘি— কিছু নাই । অবশ্ব, বনে সিল্লি ও ময়ূরের অভাব ছিল না, কিন্তু পার্থী মারিতে তেমন যেন মন সরে না বলিয়া বন্দুক থাকা সত্ত্বেও নিরামিষই থাইতে হইত। ফুলকিয়া বইহারে বাঘের ভয় আছে। একদিনের ঘটনা বলি । হাড়ভাঙা শীত সেদিন। রাত দশটার পরে কাজকৰ্ম্ম মিটাইয়া সকাল সকাল শুইয়া ঘুমাইয়া পড়িয়াছি, হঠাৎ কত রাত্রে জানি না, লোকজনের চীৎকারে ঘুম ভাঙিল। জঙ্গলের ধারের কোন জায়গায় অনেকগুলি লোক জড় হইয়া চীৎকার করিতেছে। উঠিয়া ভাড়াতাড়ি আলো জালিলাম। আমার সিপাহীরা পাশের খুপড়ি হইতে বাহির হইয়া আসিল। সবাই মিলিয়া ভাবিতেছি ব্যাপারটা কি, এমন সময়ে একজন লোক ছুটিতে ছুটিতে আসিয়া বলিল— ম্যানেজারবাৰু, বন্দুকটা নিয়ে শীগগির চলুন—বাঘে একটা ছোট ছেলে নিয়ে গিয়েছে খুপড়ি থেকে । জঙ্গলের ধার হইতে" মাত্র দু-শ, হাত দূরে ফসলের ক্ষেতে মধ্যে ডোমন বলিয়। একজন