পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী والا م لاَ উদ্দেশুে উৰ্দ্ধশ্বাসে পলাইতেছে—হুকুম হয় তো ধরিয়া আনে। বিস্থিত হইয়া বলিলাম—পালাচ্ছে কি রকম ? দৌড়ে পালাচ্ছে ? —ঘোড়ার মত দেড়চ্ছে হুজুর, এতক্ষণে বড় কুজী পার হয়ে জঙ্গলের ধারে গিয়ে পৌছল। দুৰ্ব্বত্তকে ধরিয়া আনিবার হুকুম দিলাম। এক ঘণ্টার মধ্যে চার-পাচজন সিপাহী পলাতক আসামীকে আমার সামনে আনিয়া হাজির করিল। লোকটাকে দেখিরা আমার মুখে কথা সরিল না । তাহার বয়স ষাটের কম কোনমতেই হইবে বলিয়া আমার তো মনে হইল না-মাথার চুল সাদা, গীলের চামড়া কুঞ্চিত হইয়া গিয়াছে, চেহারা দেখিয় মনে হয় সে কতকাল বুভূক্ষু ছিল, এইবার ফুলকিয়া বইহারের খামারে আসিয়া পেট ভরিয়া খাইতে পাইয়াছে। শুনিলাম সে নাকি ননীচের নাটুয়া সাজিয়া আজ কয়দিনে বিস্তর পয়সা রোজগার করিয়াছে, গ্র্যান্ট সাহেবের বটগাছের তলায় একটা খুপড়িতে থাকিত, আজ কয়দিন ধরিয়া সিপাহীরা তাহার কাছে খাজনার তাগাদ করিতেছে কারণ এদিকে ফসলের সময়ও ফুরাইয়া আসিল । আজ তাহার খাজনা মিটাইবার কথা ছিল। হঠাৎ দুপুরের পরে সিপাহীরা খবর পায় সে লোকটা তল্পিতল্পা বাধিয়া রওয়ানা হইয়াছে। মুনেশ্বর সিং ব্যাপার কি জানিতে গিরা দেখে যে আসামী বইহার ছাড়িয়া চলিতে আরম্ভ করিয়াছে পূর্ণিয় অভিমুখে— মুনেশ্বরের হাক শুনিয়া সে নাকি দোঁড়িতে আরম্ভ করিল। তাহার পরই এই অবস্থা । সিপাহীদের কথার সত্যতা সম্বন্ধে কিন্তু আমার সন্দেহ জন্মিল। প্রথমত: ননীচের নাটুয়া' মানে যদি বালক শ্ৰীকৃষ্ণ হয়, তবে ইহার সে সাজিবার বয়স আর আছে কি ? দ্বিতীয়তঃ, এ লোকটা উৰ্দ্ধশ্বাসে ছুটিয়া পলাইতেছিল, একথাই বা কি করিয়া সম্ভব! কিন্তু উপস্থিত সকলেই হলফ করিয়া বলিল—উভয় কথাই সত্য । তাহাকে কড়া মুরে বলিলাম—তোমার এ দুৰ্ব্বদ্ধি কেন হল, জমিদারের খাজনা দিতে হয় জান না । তোমার নাম কি ? লোকটা ভয়ে বাতাসের মুখে তালপাতার মত কঁাপিতেছিল। আমার সিপাহীরা একে চায় তো আরে পায়, ধরিয়া আনিতে বলিলে বাধিয়া আনে। তাহারা যে এই বৃদ্ধ নটের প্রতি খুব সদর ও মোলায়েম ব্যবহার করে নাই ইহার অবস্থা দেখিয়া বুঝিতে দেরী হইল না। লোকটা কঁাপিতে কঁাপিতে বলিল, তাহার নাম দশরথ । —কি জাত ? বাড়ী কোথায় ? —আমরা ভুইহার বাভন হুজুর। বাড়ী মুঙ্গের জেলা—সাহেবপুর কামাল। —পালাচ্ছিলে কেন ? —কই, না, পালাব কেন, হুজুর ? --বেশ, খাজনা দাও ।