পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী بوده و দেখিবার মত বটে। নাচ শেষ হইল। আমি হাততালি দিয়া যথেষ্ট প্রশংসা করিলাম। বলিলাম—এমন নাচ কখনও দেখি নি, দশরথ । বড় চমৎকার নাচে । আচ্ছা তোমার খাজনা মাপ করে দিলাম-আমার নিজ থেকে এই দুটাক বখশিশ দিলাম খুশী হয়ে । ভারি চমৎকার নাচ । আর দিন-দশবারোর মধ্যে ফসল কেনাবেচা শেষ হইয়া গেল, বাড়তি লোক সব যে যার দেশে চলিয়া গেল। রহিল মাত্র যাহারা এখানে জমি চষিয়া বাস করিতেছে, তাহারাই । দোকান-পসার উঠিয়া গেল, নাচওয়ালা, ফিরিওয়ালা অন্যত্র রোজগারের চেষ্টায় গেল। কাটুনি জনমজুরের দল এখনও পর্যন্ত্ব ছিল শুধু এই সময়ের আমোদ তামাশা দেখিবার জন্ত—এইবার তাহারাও বাসা উঠাইবার যোগাড় করিতে লাগিল । R একদিন বেড়াইয়া ফিরিবার সময় আমি আমার পরিচিত সেই নকৃছেদী ভকতের খুপড়িতে দেখা করিতে গেলাম । সন্ধ্যার বেশী দেরি নাই, দিগন্তব্যাপী ফুলকিয়া বইহারের পশ্চিম প্রাস্তে একেবারে সবুজ বনরেখার মধ্যে ডুবিয়া টকটকে রাঙা প্রকাও বড় স্বৰ্য্যটা অস্ত যাইতেছে। এখানকার এই স্বৰ্য্যাস্তগুলি-বিশেষত: এই শীতকালে—এত অদ্ভুত সুন্দর যে এই সময়ে মাঝে মাঝে আমি মহালিখারূপের পাহাড়ে স্বৰ্য্যাস্তের কিছু পূৰ্ব্বে উঠিয়া বিস্ময়জনক দৃশ্বের প্রতিক্ষা করি। নকৃছেদী তাড়াতাড়ি উঠিয়া কপালে হাত দিয়া আমার সেলাম করিল। বলিল—ও মঞ্চী, বাবুজীকে বসবার একটা কিছু পেতে দে। নকৃছেদীর খুপড়িতে একজন প্রৌঢ় স্ত্রীলোক আছে, সে যে নকৃছেদীর স্ত্রী তাহা অনুমান করা কিছু শক্ত নয়। কিন্তু সে প্রায়ই বাহিরের কাজকৰ্ম্ম অর্থাৎ কাঠভাঙা, কাঠকটা, দূরবর্তী ভীমদাসটোলার পাতকুয়া হইতে জল আনা ইত্যাদি লইয়া থাকে। মঞ্চী সেই মেয়েটি, যে আমাকে বুনো হাতীর গল্প বলিয়াছিল। সে আসিয়া শুষ্ক কাশের ডাটায় বোন একখানা চেটাই পাতিয়া দিল । তার সেই দক্ষিণ-বিহারের দেহাতী ছিকাছিকি’ বুলির মুন্দর টানের সঙ্গে মাথা দুলাইরী হাসিতে হাসিতে বলিল—কেমন দেখলেন বাবুজী বইহারের মেলা। বলেছিলাম না, কত নাচ-তামাশা আমোদ হবে, কত জিনিস আসবে, দেখলেন তো ? অনেক দিন আসেন নি বাবুজী, বসুন। আমরা যে শীগগির চলে যাচ্ছি। ওদের খুপড়ির দোরের কাছে লম্বা আধশুকনো ঘাসের উপর চেটাই পাতিয়া বসিলাম, যাহাতে স্বৰ্য্যাস্তটা ঠিক সাম্নাসামনি দেখিতে পাই। চারিদিকের জঙ্গলের গায়ে একটা মৃদু