পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একাদশ পরিচ্ছেদ Y এবার আমার একটি বিচিত্র অভিজ্ঞতা হইল । মোহনপুরা রিজার্ভ ফরেস্টের দক্ষিণে মাইল পনের-কুড়ি দূরে একটা বিস্তৃত শাল ও বিড়ির পাতার জঙ্গল সেবার কালেক্টরীর নীলামে ডাক হইবে খবর পাওয়া গেল। আমাদের হেড আপিসে তাড়াতাড়ি একটা খবর দিতে, তারযোগে আদেশ পাইলাম, বিড়ির পাতার জঙ্গল যেন আমি ডাকিয়া লই। কিন্তু তাহার পূৰ্ব্বে জঙ্গলটা একবার আমার নিজের চোখে দেখা আবশ্যক। কি আছে না-আছে না জানিয়া নীলাম ডাকিতে আমি প্রস্তুত নই। এদিকে নীলামের দিনও নিকটবৰ্ত্তী ‘তার’ পাওয়ার পরদিনই সকালে রওনা হইলাম । আমার সঙ্গের লোকজন খুব ভোরে বাক্স-বিছানা ও জিনিসপত্র মাথায় রওনা হইয়াছিল, মোহনপুরা ফরেস্টের সীমানার কারো নদী পার হইবার সময় তাহদের সহিত দেখা হইল। সঙ্গে ছিল আমাদের পাটোয়ারী বনোয়ারীলাল । কারো ক্ষীণকায় পাৰ্ব্বত্য স্রোতস্বিনী-ইটুেখানেক জল বিবুঝির করিয়া উপলরাশির মধ্য দিয়া প্রবাহিত। আমরা দুজনে ঘোড়া হইতে নামিলাম, নয়ত পিছল পাথরের মুড়িতে ঘোড়া পা হুডকাইয়া পডিয়া যাইতে পারে। দু-পারে কটা বালির চড । সেখানেও ঘোড়ায় চাপা যায় না, হাটু পৰ্য্যন্ত বালিতে এমনিই ডুবিয়া যায়। অপর পারের কডারী জমিতে যখন পৌছিলাম, •তখন বেলা এগারটা । বনোয়ারী পাটোয়ারী বলিল—এখানে রান্নাবান্না করে নিলে হয় হুজুর, এর পরে জল পাওয়া যায় কি না ঠিক নেই। নদীর দুপারেই জনহীন আরণ্যভূমি, তবে বড় জঙ্গল নয়, ছোটখাট কেঁদ পলাশ ও শালের জঙ্গল—খুব ঘন ও প্রস্তরাকীর্ণ, লোকজনের চিহ্ন কোন দিকে নাই। আহারাদির কাজ খুব সংক্ষেপে সারিলেও সেখান হইতে রওনা হইতে একটা বাজিয়া গেল । বেলা যখন য়ায়-যায়, তখনও জঙ্গলের কুলকিনারা নাই, আমার মনে হইল আর বেশী দূর অগ্রসর না হইয়া একটা বড় গাছের তলায় আশ্রয় লওয়া ভাল। অবশু বনের মধ্যে ইহার পূৰ্ব্বে দুইটি বন্ত গ্রাম ছাড়াইয়া আসিয়াছি—একটার নাম কুলপাল, একটার নাম বুরুডি, কিন্তু সে প্রায় বেলা তিনটার সময় । তখন যদি জানা থাকিত যে, সন্ধ্যার সময়ও জঙ্গল শেষ হইবে না, তাহা হইলে সেখানেই রাত্রি কাটাইবার ব্যবস্থা করা যাইত । বিশেষ করিয়া সন্ধ্যার পূৰ্ব্বে জঙ্গল বড় ঘন হইয়া আসিল। আগে ছিল ফাকা জঙ্গল, এখন যেন ক্রমেই চারিদিক হইতে বড় বড় বনম্পতির দল ভিড় করির সরু মুড়ি পথটা চাপিয়া ধরিতেছে—এখন যেখানে দাড়াইয়া আছি, সেখানটাতে তো চারিদেকেই বড় বড় গাছ, আকাশ দেখা যায় না, নৈশ অন্ধকার ইতিমধ্যেই ঘনাইয়া আসিয়াছে।