পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক ১১৭ বলিলাম—কলকাতা । —উ অনেক দুর। বড় ভারী জায়গা শুনেছি কলকাতা। —আপনি কখনও যান নি ? —না, আমরা কি শহরে যেতে পারি। এই জঙ্গলেই আমরা থাকি ভাল। বোসে । ভানুমতী কোথায় গেল, ও ভানুমতী ? মেয়েটি ছুটিতে ছুটিতে আসিয়া বলিল—কি জ্যাঠামশায় ? - –এই বাঙালী বাবু ও তার সঙ্গের লোকজন আজ আমার এখানে থাকবেন ও খাওয়াদীওয়া করবেন । আমি প্রতিবাদ করিয়া বলিলাম—না, না, সে কি! আমরা এখুনি চলে যাব, আপনার সঙ্গে দেখা করেই—আমাদের থাকার বিষয়ে— কিন্তু দেবেরু পান্না বলিলেন—ন, তা হতে পারে না। ভানুমতী, এই জিনিসগুলো নিয়ে যা এখান থেকে । আমার ইঙ্গিতে বনোয়ারীলাল পাটোয়ারী নিজে জিনিসগুলি বহিয়া অদূরবর্তী রাজার বাড়ীতে লষ্টয়া গেল ভানুমতীর পিছু পিছু। বৃদ্ধের কথা অমান্ত করিতে পারিলাম না, বৃদ্ধের দিকে চাহিয়াই আমার সম্বুমে মন পূর্ণ হইয়া গিয়াছিল। সাওতাল-বিদ্রোহের নেতা, প্রাচীন অভিজাত-বংশীয় বীর দেবেরু পান্না ( হইলই বা আদিম জাতি ) আমাকে থাকিতে অনুরোধ করিতেছেন—এ অনুরোধ আদেশেরই সামিল । রাজা দেবিরু পান্ন৷ অত্যন্ত দরিদ্র, দেখিয়াই বুঝিয়াছিলাম। তাহাকে গরু চরাইতে দেখিয়া প্রথমটা আশ্চৰ্য্য হইয়াছিলাম বটে, কিন্তু পরে মনে ভাবিয়া দেখিলাম ভারতবর্ষের ইতিহাসে রাজা দেবিরু পান্নার অপেক্ষ অনেক বড় রাজা অবস্থাবৈগুণ্যে গোচরণ অপেক্ষাও হীনতর বৃত্তি অবলম্বন করিয়াছিলেন । * রাজা নিজের হাতে শালপাতার এক চুরট গডিয়া আমার হাতে দিলেন। দেশলাই নাই —গাছের তলায় আগুন করাই আছে—তাহ হইতে একটা পাতা জালাইয়া সম্মুখে ধরিলেন। বলিলাম—আপনারা এ-দেশের প্রাচীন রাজবংশ, আপনাদের দর্শনে পুণ্য আছে। দেবিরু পান্না বলিলেন—এখন আর কি আছে ? আমাদের বংশ স্বৰ্য্যবংশ । এই পাহাড়-জঙ্গল, সারা পৃথিবী আমাদের রাজ্য ছিল। আমি যৌবন বয়সে কোম্পানীর সঙ্গে লড়েছি। এখন আমার বয়স অনেক । যুদ্ধে হেরে গেলাম। তার পর আর কিছু নেই। এই আরণ্য ভূভাগের বহিঃস্থত অন্ত কোনও পৃথিবীর খবর দেবেরু পান্না রাখেন বলিয়া মনে হইল না। র্তাহার কথার উত্তরে কি একটা বলিতে যাইতেছি, এমন সময় একজন যুবক অসিয়া সেখানে দাড়াইল । রাজা দেবিরু বলিলেন—আমার ছোট নাতি, জগরু পান্ত । ওর বাবা এখানে নেই, লছমীপুরের রাণী-সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছে। ওরে জগর, বাবুজীর জন্তে খাওয়ার যোগাড় কর ।